যুব সমাজের সমস্যার কারণ ও প্রতিকার:
যুব সমাজের সমস্যার কারণ ও প্রতিকার:
হে মুসলিম ভাইয়েরা! আমরা আমাদের আলোচনায় যুবকদের কতক সমস্যা ও কুরআন ও সূন্নাহের আলোকে তার সমাধান তুলে ধরতে চাই। ইসলামই একমাত্র দ্বীন যাতে রয়েছে যাবতীয় সব সমস্যার সমাধান। যখন কোন মানুষ তার বাস্তব জীবনে ইসলামকে পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে, তখন তার জীবনে আর কোন সমস্যা থাকতে পারে না। বর্তমানে যুব সমাজের সমস্যা অনেক। নিম্নে কতক সমস্যার কথা আলোচনা করা হল:
প্রথমত: বর্তমান যুগের যুবকরা মারাত্মক ও ভয়ানক বিপদের সম্মুখীন। যদি যুবকদের স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া হয়, তবে এটি তাদের জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা ও তাদের জীবনের জন্য আত্মাহুতি। বর্তমান পরিস্থিতি তাদের চরিত্র ও আচার ব্যবহারকে খারাপ করে দেয় এবং তাদের মন মানসিকতা ও তাদের বিশ্বাসকে নষ্ট করে দেয়। বর্তমান সময়ে যুব সমাজকে ধ্বংসের
উপকরণ অসংখ্য ও অগণিত। কতক ধরনের উপকরণ আছে, যেগুলো প্রচার মাধ্যম গুলোর কারণে আমাদের সম্মুখীন হতে হয়। যেমন, রেডিও, টেলিভিশন, পেপার, নগ্ন ম্যাগাজিন ইত্যাদি। এগুলো যুব সমাজকে ধ্বংস করা ও তাদের চরিত্রকে হরণ করার জন্য খুবই ক্ষতিকর ও বিষাক্ত মাধ্যম। বর্তমানে আমরা প্রতিটি যুবকের হাতে নগ্ন পেপার পত্রিকা ও ম্যাগাজিন গুলো দেখতে পাই। যুবকরা তাদের নিজেদের ক্ষতিকর দিকসমূহ বুঝতে না পেরে এ সবের প্রতি হুমড়ি দিয়ে লিপ্ত হয়ে পড়ে। যুব সমাজ যদি এ সব ক্ষতিকর উপকরণ –চাই ছবি হোক বা পড়ার বিষয় হোক- ছেড়ে দেয়, এটি তাদের কল্যাণকে নিশ্চিত করে। কারণ, এ সবের পরিণতি খুবই মারাত্মক ও ক্ষতিকর।
বর্তমানে অধিকাংশ যুবকের নৈতিক অবক্ষয় ও পতনের কারণ, তারা তাদের নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ছেড়ে দিয়ে, পশ্চিমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অন্ধ অনুকরণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়া। আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে তারা তাদের নির্মিত সব ধরনের অশ্লীল ও অ-রুচিশীল উপকরণকে আমাদের মুসলিম সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। আর আমাদের যুবকরা
তাদের ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। ফলে তারা পোশাক-আশাক, চলা-ফেরা সহ যাবতীয় সব বিষয়ে পুরোপুরি পশ্চিমাদের অন্ধ অনুকরণে ব্যস্ত।
আর তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা হল, আমাদের যুবকদের বিশ্বাসের উপর আঘাত করা এবং আকীদা বিশ্বাসকে নষ্ট করা। ফলে অনেক মুসলিম যুবককে দেখা যায়, পশ্চিমাদের খপ্পরে পড়ে তারা তাদের ঈমান আকীদা নষ্ট করে ফেলে। ফলে তারা নাস্তিক, মুরতাদ ও ধর্মহীনে পরিণত হয় এবং তাদের চিন্তাধারাতে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি ভ্রান্ত মতবাদ স্থান করে নেয়। যখন একজন যুবক এ সব পশ্চিমা ও বিজাতীয় সংস্কৃতিতে বসবাস করতে থাকবে, তখন সে অতি সহজেই তাদের চিন্তা ধারা ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হবে। কারণ, তার মন মানসিকতাকে রক্ষা করার মত পর্যাপ্ত জ্ঞান তার মধ্যে অনুপস্থিত। তারা ইসলামী আকীদা ও বিশ্বাস সম্পর্কে যেসব আপত্তি ও সংশয় তুলে ধরে, তার উত্তর দেয়ার মত পর্যাপ্ত জ্ঞান তার মধ্যে না থাকাতে সে ভ্রান্ত ও বাতিলকেই সত্য বলে গ্রহণ করবে। যার ফলে সে তার নিকট যা পায় তাই গ্রহণ করে থাকে। যেমন-কবি বলেন,
عرفت هواها قبل أن أعرف الهوى - فصادف قلبا خاليا فتمكنا
“আমি প্রবৃত্তিকে জানার পূর্বে তার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছি। সে অন্তরকে খালি পেয়ে তাতে স্থান করে নিয়েছে”।
মোট কথা, যে যুবক পশ্চিমাদের চিন্তাধারা ও তাদের অপসংস্কৃতির খপ্পরে পড়ে, তার অন্তর সত্যিকার ইলম থেকে খালি হয়। আর যখন কোন মানুষের অন্তরে এ সব উপকরণে একবার প্রবেশ করে, তখন তা বের করা কঠিন হয়। এটি বর্তমান সময়ে আমাদের যুব সমাজের জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা।
দ্বিতীয়ত: প্রচার মাধ্যমের পর যুব সমাজকে ধ্বংসের অন্যতম উপকরণ হল, পশ্চিমা ও বিজাতীয় দেশগুলোতে যুবকদের সফর করতে যাওয়া। বিজাতিদের দেশে প্রবেশ করা দ্বারা তাদের চিন্তার বিকৃতি ঘটে এবং তারা সৃষ্টি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক ও অনর্থক চিন্তায় লিপ্ত হয়। তবে আমরা সব প্রচার মাধ্যমকে দোষারোপ করছি না। কারণ, এখানে কিছু কিছু প্রচার মাধ্যম আছে যেগুলো ভালো কিন্তু সেগুলোর সংখ্যা খুবই কম। আমরা শুধু সে সব প্রচার মাধ্যমকে দোষারোপ করছি, যেগুলো অশ্লীলতা ও নাস্তিকতার ধারক বাহক। একটা সময় আসে যখন একজন যুবক অমুসলিম ও খৃষ্টীয় রাষ্ট্র-যেগুলো মানবতা ও চরিত্র ধ্বংসের কারখানা-দেখার উদ্দেশ্যে সফর করতে যায়, তখন সেখানে গিয়ে তাদের বিভিন্ন প্রকার অপসংস্কৃতি, উলঙ্গ-পনা, নষ্টামি ও বিকৃত চিন্তা ধারা দেখে, সে তা দ্বারা তারা প্রভাবিত হয়। কারণ, তার নিকট এ পরিমাণ জ্ঞান-বুদ্ধির পুঁজি নাই, যা দ্বারা সে এ সব বিকৃতি, নাস্তিকতা, নষ্টামি ও অপসংস্কৃতির জবাব দেবে। এ কারণেই দেখা যায়, যখন একজন যুবক ঐ সব দেশে ভ্রমণ করে এবং তাদের পরিবেশ ও নাগরিকদের সাথে উঠ-বস করে, তা খুব দ্রুত তার দ্বীন ও সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করে দেয়। তখন সে খালি হাত দেশে ফিরে আসে। আর এটি হল, একজন যুবকের চারিত্রিক ও মানসিক বিকৃতির অন্যতম কারণ। অর্থাৎ, পশ্চিমা ও বিজাতীয় দেশগুলো সফর করাও অনেক সময় যুব সমাজ ধ্বংসের কারণ হয়ে থাকে।
তৃতীয়ত: যুব সমাজের অবক্ষয়ের অপর একটি কারণ, অজ্ঞতা ও মূর্খতা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া। অধিকাংশ যুবক এমন আছে তারা তাদের দ্বীন সম্পর্কে কিছুই জানে না। কারণ, তারা ভালো ও
মন্দের মধ্যে বিচার করা এবং হারাম হালাল নির্ণয় করার জন্য যতটুকু শিক্ষা অর্জন করা দরকার তা আদৌ লাভ করেনি।
উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও আরও অসংখ্য বিধ্বংসী কারণ রয়েছে, যেগুলো একজন যুবককে প্রভাবিত করে এবং তাকে দ্বীন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। যার অ-শুভ পরিণতি আমরা বাস্তবে প্রত্যক্ষ করছি, সমাজের তাদের অপরাধ প্রবণতা লক্ষ করছি এবং তাদের কারণে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।