জলাতঙ্ক
জলাতঙ্ক
জলাতঙ্ক একটি মারাত্মক অসুখ। একবার এই রোগ হলে বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে এর ভালো প্রতিষেধক আছে। আক্রান্ত হবার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষেধক নিলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। অ্যান্টিরোবিস ইঞ্জেকশন সময়মতো নিলে জলাতঙ্ক রোগ হয় না। কুকুর, বেড়াল, বাঁদর, খেঁকশিয়াল, নেকড়ে, বাদুড়, মানুষ ইত্যাদি প্রাণীর কামড়ে জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে। এমনকী জলাতঙ্কের প্রতিষেধক দেওয়া আছে এমন পোষা কুকুরে কামড়ালেও জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
জলাতঙ্কে আক্রান্ত প্রাণীটির লক্ষণ :
(১) রোগগ্রস্ত জানোয়ারটি অদ্ভুত আচরণ করে।
(২) পাগলামো করে ।
(৩) ঝিমিয়ে থাকে আবার অনেক সময় চিৎকার করে।
(৪) হিংস্র হয়ে ওঠে।
(৫) মুখ দিয়ে ফেনা ওঠে।
(৬) কিছু খায় না, সাধারণত দশ দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়।
কীভাবে রোগ ছড়ায় :
(১) জন্তু জানোয়ারের কামড়ে
(২) জন্তু জানোয়ার ও পোষা প্রাণীর আঁচড়ে
(৩) জন্তু জানোয়ারের লালায়
(৪) জলাতঙ্কে আক্রান্তের কাঁচা দুধ খেলে
(৫) ক্ষতস্থানে পশু চাটলে
(৬) গভীর ক্ষত পশুর লালার সংস্পর্শে এলে
এই জীবাণু ছোট ভাইরাস – আকৃতি বুলেটের মত, যা প্রথমে স্থানীয় কোষকলা ও মাংসপেশিতে বংশবৃদ্ধি করে। তারপর এটা স্নায়ুতে ঢোকে। স্নায়ু দিয়ে বেশ দ্রুত গতিতে ভাইরাস যায় মস্তিষ্কে। মস্তিষ্ক আক্রান্ত হলে শুরু হয় জলাতঙ্ক। জলাতঙ্কে জলে আতঙ্ক। বাতাসে আতঙ্ক, শব্দে আতঙ্ক। আলোতে আতঙ্ক। শেষে মৃত্যু।
সংক্রমণের সময়কাল :
শরীরে ভাইরাস প্রবেশ ও জলাতঙ্কের রোগলক্ষণ দেখা দেওয়ার মধ্যে সাধারণত তিন সপ্তাহ থেকে তিন মাস সময় লাগে। তবে তিন থেকে চার দিনের মধ্যেও রোগলক্ষণ দেখা দিতে পারে। আবার দুই বছর সময় লাগতেও পারে রোগলক্ষণ প্রকাশ পেতে, তবে একবার জলাতঙ্ক শুরু হয়ে গেলে রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব। তাই কামড় বা আচড়ের ২৪ ঘন্টা থেকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিষেধক দিতে পারলে অনেকটা সুরক্ষিত থাকা যায়।
জলাতঙ্কের রোগলক্ষণ :
(১) রোগ লক্ষণ প্রকাশকালের শুরুতে গা ম্যাজম্যাজের সঙ্গে জ্বর ও মাথা ব্যথা।
(২) ক্ষতস্থানে ব্যথা ও ক্ষতের চারপাশের মাংসপেশিতে খিঁচ ধরে ও লাল হয়ে ফুলে যায়।
(৩) গলা সহ সারা শরীরের মাংসপেশিতে খিঁচ ধরে ফলে রোগী খাদ্য এমনকি জল পর্যন্ত খেতে পারে না। এরপর জল দেখলেই গলার মাংসপেশিতে ব্যথা বা খিঁচ হয় ৷
(৪) সংক্রমণে ঘাও হতে পারে।
(৫) শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যাহত হয় ও ঢোক গিলতে পারে না।
(৬) প্রত্যাঘাত বা শকও হতে পারে, রোগী ঝিমিয়েও থাকতে পারে আবার চিৎকার চেঁচামেটিও করতে পারে।
(৭) শেষের দিকে খিঁচুনি ও সারা শরীর অসাড় হয়ে যায় ।
কামড়ের জায়গায় প্রাথমিক চিকিৎসা
(১) কামড়ের জায়গাটা ও ক্ষতস্থান ভালো করে দশ মিনিট ধরে সাবান জল দিয়ে ধুতে হবে।
(২) কামড়ের জায়গাটায় চলমান জলের ধারা বা পাম্পের ট্যাপের জলের নীচে রাখতে হবে।
(৩) টিটেনাস যাতে না হয় তার জন্য টিটেনাস ইমিউনোগ্লোবিন ইঞ্জেকশন দিতে হবে।
(৪) যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঐ ব্যক্তিকে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।
(৫) শক হলে শকের চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
কী করবে না
(১) ক্ষতস্থান কার্বোলিক অ্যাসিড দিয়ে পোড়ানোর চেষ্টা করা ক্ষতিকারক এবং সাধারণত ব্যান্ডেজ করাও উচিত নয়।
প্রতিরোধ
(১) জলাতঙ্কে, আক্রান্তের লালা, প্রস্রাব, ঘাম, মলও বিষাক্ত। এসব এড়িয়ে চলতে হবে।
(২) কামড়ের সঙ্গে সঙ্গেই অ্যান্টিরেবিস ইঞ্জেকশন নিতে হবে এবং ব্যথা কমানোর ওষুধ দিতে হবে।
(৩) যদি অভিঘাত বা শক হয় তাহলে অভিঘাতের চিকিৎসা করতে হবে। ধনুষ্টঙ্কারের ভ্যাকসিন রোগীকে দিতে হবে ।
(৫) পোষা কুকুরের টিকা দেওয়া থাকলেও প্রতিষেধক ইঞ্জেকশন নিতে হবে।
(৬) বাড়িতে পোষা কুকুর, বেড়াল থাকলে অবশ্যই নিয়মিত তাকে টিকাকরণ করতে হবে।