ইনশাআল্লাহ এর অর্থ কি? কখন বলবেন?
অর্থ-
আল্লাহ তায়ালা যদি চান/ আল্লাহ ইচ্ছা করলে
কখন বলবেন?
কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে All Right, I will try না বলে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলুন।
ইনশাআল্লাহ কেন বলবেন?
ইনশাআল্লাহ কেন বলবেন কুরআন থেকে তার প্রমান:
সূরা আল কাহাফ @১৮ :২৩, ২৪
"২৩. (হে নবী,) কখনো কোনো কাজের ব্যাপারে এ কথা বলো না, (এ কাজটি) আমি আগামীকাল করবো, ২৪. বরং (বলো,) আল্লাহ তায়ালা যদি চান (তাহলেই আমি আগামীকাল এ কাজটা করতে পারবো), যদি কখনো (কিছু) ভুলে যাও তাহলে তোমার রবকে স্মরণ করো এবং বলো, সম্ভবত আমার রব এর চাইতে নিকটতর কোনো কল্যাণ দিয়ে আমাকে পথ দেখাবেন। @১৮ :২৩, ২৪."
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
(২৪) ইন শাআল্লাহ (আল্লাহ ইচ্ছা করলে) এই কথা না বলে;[1] যদি ভুলে যাও, তবে তোমার প্রতিপালককে স্মরণ করো[2] ও বলো, ‘সম্ভবতঃ আমার প্রতিপালক আমাকে এ অপেক্ষা সত্যের নিকটতম পথ নির্দেশ করবেন।’[3]
[1] মুফাসসিরগণ বলেন যে, ইয়াহুদীরা নবী (সাঃ)-কে তিনটি কথা জিজ্ঞাসা করেছিল। আত্মার স্বরূপ কি এবং গুহার অধিবাসী ও যুল-কারনাইন কে ছিল? তাঁরা বলেন যে, এই প্রশ্নগুলোই ছিল এই সূরা অবতীর্ণ হওয়ার কারণ। নবী (সাঃ) বললেন, আমি তোমাদেরকে আগামী কাল উত্তর দেব। কিন্তু এর পর ১৫ দিন পর্যন্ত জিবরীল (আঃ) অহী নিয়ে এলেন না। অতঃপর যখন এলেন, তখন মহান আল্লাহ ‘ইন শা-আল্লাহ’ বলার নির্দেশ দিলেন। আয়াতে غَدًا (আগামী কাল) বলতে ভবিষ্যৎ বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, অদূর ভবিষ্যতে বা দূর ভবিষ্যতে কোন কাজ করার সংকল্প করলে, ‘ইন শা-আল্লাহ’ অবশ্যই বলে নিও। কেননা, মানুষ তো জানেই না যে, যা করার সে সংকল্প করে, তা করার তাওফীক সে আল্লাহর ইচ্ছা থেকে পাবে, না পাবে না?
[2] অর্থাৎ, বাক্যালাপ অথবা অঙ্গীকার করার সময় যদি ‘ইনশা-আল্লাহ’ বলতে ভুলে যাও, তবে যখনই স্মরণ হবে তখনই তা বলে নাও। অথবা প্রতিপালককে স্মরণ করার অর্থ, তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা কর, তাঁর প্রশংসা কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে নাও।
[3] অর্থাৎ, আমি যা করার সংকল্প করছি, হতে পারে মহান আল্লাহর তার থেকেও উত্তম এবং ফলপ্রসূ কাজের প্রতি আমার দিক নির্দেশনা করবেন।
প্রাসঙ্গিক আলোচনা:
জন্ম থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি মুহুর্তে আমরা আল্লাহর উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। আমাদের দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তাঁরই ইচ্ছার অধীনে চলছে। তিনি ক্ষমতা না দিলে একটি সাধারণ কাজ করতেও আমরা অক্ষম। কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই যেকোনো সময়ে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারি। আমাদের কর্মক্ষমতা লোপ পেতে পারে। মস্তিষ্কে বিভ্রাট ঘটতে পারে। এমনকি, আগামী কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমরা মারাও যেতে পারি।
আমরা চাইলেই সব হবে এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু, আল্লাহ চাইলে সবই হয়।
অতএব, “আমি আগামীকাল এই কাজটি করব” অথবা “অমুক সময়ে তমুক কাজটি আমি করব” – এভাবে না বলে আমাদের বলা উচিৎ “আল্লাহ চাইলে আমি আগামীকাল এই কাজটি করব” অথবা “আল্লাহ চাইলে অমুক সময়ে তমুক কাজটি আমি করব”।
আল্লাহর হাতে আমাদের ভবিষ্যতকে এভাবে সোপর্দ করে দেওয়ার মাধ্যমে আমরা বুঝিয়ে দিচ্ছি যে, আমরা যা চাই না কেন, যেভাবে চাই না কেন, যখন চাই না কেন – তা হওয়া বা না হওয়া একান্তই তাঁর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। মানুষ হিসেবে আমাদের কাজ চেষ্টা করে যাওয়া। আল্লাহ চাইলে আমাদের ইচ্ছার বাস্তবায়ন হবে। আর তাঁর ইচ্ছা ভিন্ন কিছু হলে তারই প্রকাশ ঘটবে।
আল্লাহর ইচ্ছার অধীনে আমাদের যাবতীয় ইচ্ছা ও আকাঙ্খাকে পুরোপুরি সমর্পন করে দিতে সক্ষম হলে জীবন সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমূল বদলে যাবে। কেবল তখনই আমরা অনুধাবন করতে পারব যে, আমাদের জীবনে যত সাফল্য এসেছে তা আমাদের কারও একক প্রচেষ্টার ফসল নয়। আল্লাহর সাহায্য না থাকলে আমরা কখনোই সাফল্যের মুখ দেখতে পারতাম না।
পক্ষান্তরে, আমাদের জীবনে যত ‘প্রতিকূলতা’ এসেছে তা আল্লাহর ইশারাতেই হয়েছে। আর আমরা যাকে প্রতিবন্ধকতা বলে এখন মনে করছি তা আমাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে কল্যাণকরও হতে পারে।
এই বাস্তবতাটি হৃদয়ঙ্গম করতে পারলে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করেও আমরা বিনয়ী থাকতে পারব এবং কোনো বিষয়ে আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থ হলেও ভেঙে না পড়ে আমরা ধৈর্য ধারণ করতে শিখব। ইনশাআল্লাহ।