অবিশ্বাসীরাই আসহাবুল উখদুদ
অবিশ্বাসীরাই আসহাবুল উখদুদ
আসহাব-অধিবাসী । আর উখদুদ-গর্তের ।
সব মিলিয়ে আসহাবুল উখদুদ মানে ‘গর্তের অধিবাসী’। কথায় বলে অন্যের জন্য গর্ত খননকারীই গর্তে পড়ে । আর এখানেও হয়েছে তাই । কুরআনুল কারিমের অন্য ক'টা সূরার মতোই একটি সূরা আল বুরুজ । এখানে বলা হয়েছে গর্তওয়ালাদের নির্মম পরিণতির কথা । উল্লেখ করা হয়েছে তাদের নির্মম পরিহাসের কারণ ও করুণ বর্ণনা । ঈমান আনার অপরাধে যাদের আগুনের গর্তে পুড়িয়ে মারা হয়েছে । মুসলমানের নির্মম ও নির্দয় মৃত্যু দৃশ্য দেখে যারা তামাশা করেছিলো । অবশেষে আগুনের গর্তে পড়ে তারাই হয়েছে আসহাবুল উখদুদ ।
পাঁচ শত তেইশ সালের ঘটনা। ঈমানের দাবিদারদেরকে জুলুম নির্যাতন করা হয়েছে পৃথিবীর শুরু থেকেই । এ যেন তারই ধারাবাহিকতা । দক্ষিণ আরবের নাজরানের ধর্মীয় নেতা উসকুফ। আসহাবুল উখদুদ বা গর্তে আগুন জ্বালিয়ে ঈমানদারদের নিক্ষেপ করে হত্যা করে নির্মমভাবে । এ ঘটনা পবিত্র হাদিস শরীফে একাধিকবার বর্ণিত হয়েছে। রাসূল থেকে বর্ণিত হয়েছে । হযরত সুহাইব রুমী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর ঘটনাটি হলো এমন । কোন এক বাদশাহর ছিলো একজন যাদুকর। বয়সের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে যাদুকর বললো । হে বাদশাহ নামদার! আমার জীবন সূর্য প্রায় অস্তমিত। একটি মেধাবী ও ভালো ছেলে দিন। যে যাদু শিখে রাখবে । যাদুকরের কথা অনুযায়ী বাদশাহ তাই করলো। একজন চৌকস ও বুদ্ধিমান ছেলে দিলো। ঘটে গেলো বিপত্তি। যাদুকরের কাছে আসা যাওয়ার পথে ছেলেটি পেলো সত্যের সন্ধান । সাক্ষাৎ হলো ঈসায়ী ধর্মের সাধক (রাহেব)-এর সাথে । রাহেবের কথায় প্রভাবিত হলো সে । ঈমান আনলো এক আল্লাহর ওপর । হলো ঈমানের আলোয় আলোকিত । রাহেবের দীনি শিক্ষার কিছু অলৌকিক শক্তির অধিকারীও হলো ছেলেটি । যেমন দৃষ্টিহীনকে দৃষ্টি শক্তি দেয়া। কুষ্ঠ রোগ নিরাময় করা ইত্যাদি । ছেলেটি এখন ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত। একথা জেনে গেলো বাদশাহ নিজে। বাদশাহ রেগে-মেগে খুন হওয়ার পালা। প্রথমে হত্যা করলো রাহেবকে । উদ্যত হলো হত্যা করতে ছেলেটিকে। কিন্তু ব্যর্থ হলো কয়েকবার। কোনো অস্ত্র দিয়ে কোনোভাবেই হত্যা করতে পারে না ছেলেটিকে বাদশাহ ।
অবশেষে কি হলো জানো! বালকটি বলে দিলো তাকে মারার উপায়। কৌশল বাতলিয়ে বালকটি বললো । বাদশাহ নামদার! সত্যিই কি আপনি আমাকে হত্যা করতে চান? তাহলে এক কাজ করুন। প্রকাশ্যে জনসমক্ষে তীর মারুন এই বলে । 'বিইসমি রব্বিল গুলাম' অর্থাৎ এই বালকের রবের নামে । আপনি দেখবেন । তাতেই আমি মারা যাবো। বাদশাহ ছেলেটির কথা অনুযায়ী তাই করলো । ফলে ছেলেটি সত্যি সত্যি মারা গেলো ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উপস্থিত জনতা সজোরে চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলো । “আমানতু বিরব্বিল গুলাম” মানে আমরা ছেলেটির রবের প্রতি ঈমান আনলাম । বাদশাহ পড়লো বেকায়দায় বাদশাহর সভাসদরা হলো চিন্তিত। তারা বললো, এখন কী করব আমরা? ঘটনা তাই হলো । যা থেকে আপনি দূরে থাকতে চেয়েছিলেন। লোকজন আপনার ধর্ম ত্যাগ করছে। ছেলেটির ধর্ম গ্রহণ করছে লোকেরা দলে দলে । বাদশাহর রাগ আর ধরেনা। বাদশাহর নির্দেশে রাস্তার পাশে খনন করা হলো বিশাল বিশাল গর্ত। জ্বালানো হলো তাতে আগুন। দাউ দাউ করা সর্বনাশা আগুন । ঈমান ছাড়ার আহ্বান জানানো হলো সবাইকে । দুর্বল লোকেরা ছেড়ে দিলো ঈমান । আর ঈমানের দাবীতে অটলদের নিক্ষেপ করা হলো আগুনের গর্তে । কিভাবে পুড়ছে ঈমানদাররা । সে করুণ দৃশ্য দেখেছিলো তারা। আর অট্টহাসি হাসলো- যারা ছিলো অবিশ্বাসী ও বাদশাহর অনুসারী । (মুসনাদে আহমাদ ও মুসলিম)
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, এরকম অন্য আরেকটি ঘটনা । ইরানের এক বাদশাহ শরাব পান করে । হয়ে পড়ে নেশাগ্রস্ত আপন বোনের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সে। অবলীলাক্রমে। ঘটনাটি জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়ে পড়লো বিদ্যুৎ গতিতে । বাদশাহ ঘোষণা করলো, মহান আল্লাহ বোনের সাথে বিয়ে ব্যবস্থা হালাল করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। জনগণকে এ কথা মানতে বাধ্য করার চেষ্টা করা হয় অন্যায়ভাবে । যারা রাজি হলো না তাদের ওপর নেমে আসলো শাস্তির খড়গ । আর নির্যাতনের স্টীম রোলার । এমনকি যারা মানতে রাজি হয় না তাদেরকে নিক্ষেপ করে জলন্ত অগ্নিকুন্ডে । মূলত: এই সময় থেকেই অগ্নি উপাসকদের মধ্যে রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়কে বিয়ে পদ্ধতির প্রচলন হয় (ইবনে জারীর) ।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কর্তৃক বর্ণিত । আরেকটি ঘটনা। আনছ বেবিলনের অধিবাসীরা বনি ইসরাইলকে হযরত মুসা আলাইহিসসালামের দীন থেকে বিরত রাখার জোর প্রচেষ্টা চালায়। যারা তাদের কথা মেনে নিতে অস্বীকার করতো তাদের ওপর নেমে আসতো নিমর্ম নির্যাতনের স্টিম রোলার। এমনকি তাদেরকে নিক্ষেপ করতো আগুনে ভর্তি জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে । (ইবনে জারীর)
আর একথা সূরা বুরুজে আল্লাহ বলেছেন এভাবে। মু'মিনদের সাথে করা কৃতকর্ম যারা আনন্দের সাথে উপভোগ করেছিলো। অবস্থান গ্রহণ করেছিলো তাদেরই তৈরি করা অগ্নিভরা গর্তের কাছে। অবশেষে তারাই নিহত হয়েছিলো যারা ছিলো এর স্বপ্নদ্রষ্টা ও মালিক। তারাই হলো “আসহাবুল উখদুদ” আর নির্দোষ ও নিরপরাধ মু'মিনদের দোষ ছিলো মহাপরাক্রমশালী ও স্বপ্রশংসিত মহান রবের প্রতি ঈমান গ্রহণ ৷ তাফসিরবিদদের মতে এ অগ্নিকুণ্ডের মহানায়ক ছিলো ইয়ামেনের যালিম বাদশাহ যুনওয়াস। আসহাবুল উখদুদের ঘটনায় এটাই প্রমাণ হলো । কারো জন্য অন্যায়ভাবে কূপ খনন করলে সে কূপে কূপ খননকারীকে পড়তে হয় । (সূরা আল বুরুজ অবলম্বনে)
প্রশ্ন
১. আসহাবুল উখদুদ কারা?
২. ঈমানদার ছেলেটি মারার দোয়া কী ছিলো?
৩. কোন্ দেশের বাদশাহ শরাব পান করেছিলো?
৪. যাদু শিক্ষাকারী ছেলেটি কার কাছে ঈমান এনেছিলো? ৫. ‘আসহাবুল উখদুদ’ এর ঘটনা কোন সূরায় উল্লেখ আছে?