Solution of mental problem

Rumman Ansari   2019-09-22   Student   Islam > Mental-problem   1132 Share

মানসিক সমস্যার সমাধান!

 

কু’রআনে কিছু আয়াত রয়েছে, যেখানে আল্লাহ تعالى আমাদের অনেক মানসিক সমস্যার সমাধান দিয়ে দিয়েছেন। এই আয়াতগুলো আমরা যখন মনোযোগ দিয়ে পড়ি, তখন একটা ধাক্কা খাই। যখন আমরা এই আয়াতগুলো সময় নিয়ে ভেবে দেখি, তখন আমাদের হতাশা, অবসাদ, ডিপ্রেশন, কিছু না পাওয়ার দুঃখ, নিজের উপরে রাগ, অন্যের উপরে হিংসা, প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা —এই সবকিছু কাটিয়ে ওঠার শক্তি খুঁজে পাই। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করি যে, আমরা এতদিন থেকে যেসব সমস্যায় ভুগছিলাম, তার সমাধান তো কু’রআনেই দেওয়া আছে!
এরকম একটি আয়াত হলো—

 

তুমি কি জানো না: সবগুলো আকাশ এবং পৃথিবীর অধিপতি একমাত্র আল্লাহ? আল্লাহ ছাড়া তোমাদেরকে রক্ষা করার কেউ নেই, সাহায্য করারও কেউ নেই? [আল-বাক্বারাহ ১০৭]

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু ঘটনার সাথে এই আয়াতের সম্পর্ক কোথায়, তার কিছু উদাহরণ দেই—

হাসান সাহেবের বাবা একজন পরহেজগার মানুষ ছিলেন। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। সব রোজা রাখতেন। গরিব আত্মীয়স্বজন তার কাছে এসে কিছু চেয়ে কখনো খালি হাতে ফেরত যেত না। কিন্তু একদিন তার ক্যান্সার হলো। এক প্রচণ্ড কষ্টের ক্যান্সার। তিনি প্রায় একবছর বিছানায় শুয়ে ভীষণ কষ্ট করতে করতে একসময় মারা গেলেন। হাসান সাহেব এই ঘটনায় একেবারে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরলেন। তিনি কোনোভাবেই নিজেকে বোঝাতে পারছেন না: কেন তার বাবার সাথে এরকম হলো? কেন তার বাবা সুস্থ অবস্থায় আর দশজনের মত মারা গেলেন না? কেন আল্লাহ تعالى তার সাথে এমন করলেন? তাদের মত এত ভালো একটা পরিবারের সাথে তো আল্লাহর تعالى এমন করার কথা নয়?

এর উত্তর রয়েছে এই আয়াতে—

তুমি কি জানো না: সবগুলো আকাশ এবং পৃথিবীর অধিপতি একমাত্র আল্লাহ?

আমরা ভুলে যাই যে, আকাশে এবং পৃথিবীতে যা কিছুই আছে, সবকিছু আল্লাহর تعالىসম্পত্তি। আমি আল্লাহর تعالى সম্পত্তি। আমার বাবা-মা, ছেলেমেয়ে, স্ত্রী — সবাই আল্লাহর تعالى সম্পত্তি। তিনি অনুগ্রহ করে কিছু দিনের জন্য তাঁর সম্পত্তিগুলো আমাকে উপভোগ করার সুযোগ দিয়েছেন। তার মানে এই নয় যে, আমি সেগুলোর মালিক হয়ে গেছি, বা সেগুলোর উপরে আমার কোনো দাবি বা অধিকার রয়েছে। আল্লাহ تعالى যখন ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা তাঁর সম্পত্তি তাঁর কাছে নিয়ে যেতে পারেন। এখানে আমার দাবি করার কিছুই নেই।

শুধু তাই না, আল্লাহ تعالى তাঁর সম্পত্তির ব্যাপারে আমার থেকে অনেক বেশি জানেন। আমি আমার বাবাকে, মা-কে কয়দিন দেখেছি? তাদের পুরো জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি চিন্তা, প্রতিটি কাজ — সবকিছু আল্লাহ تعالى তাদের থেকেও ভাল করে জানেন। তারা বেঁচে থাকলে কী করতেন, আর কয়েকবছর আগে চলে গেলে কী সব গুনাহ করা থেকে বেঁচে যেতেন, সেটা আমি তো দূরের কথা, তারা নিজেরাও জানেন না। অথচ আল্লাহ تعالى ঠিকই জানেন। আমি কোথাকার কে যে, তাদের সম্পর্কে আল্লাহর تعالى কাছে কৈফিয়ত চাচ্ছি?

আমি আমার বাবা-মাকে সৃষ্টি করিনি। আমি দশ বছর চাকরি করে অর্থ উপার্জন করে, তারপর তা খরচ করে আমার সন্তানকে কিনে আনিনি। আমি পৃথিবীতে আসার আগে আল্লাহর تعالى সাথে চুক্তি করে আসিনি যে, আমার বাবা-মা যদি সারাজীবন সুস্থ সবল থাকেন, আমার স্ত্রী-সন্তানদের যদি কোনোদিন অসুখ না হয়, তাহলে আমি পৃথিবীতে যাবো, না হলে যাবো না। বরং আমি যদি একদিনও আমার বাবাকে সুস্থ অবস্থায় পাই, একদিনও আমার মা’র সাথে হাসিমুখে কাটাতে পারি, আমার সন্তানের হাসি একদিনের জন্যও দেখতে পারি, তাহলে সেটা পুরোটাই আমার উপরে আল্লাহর تعالىবিরাট অনুগ্রহ। আমি আল্লাহকে تعالى কিছুই দেইনি এগুলো আমাকে উপভোগ করতে দেওয়ার জন্য। দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না, কারণ—

তুমি কি জানো না: সবগুলো আকাশ এবং পৃথিবীর অধিপতি একমাত্র আল্লাহ?

আরেকটি ঘটনা দেখি—

চৌধুরী সাহেব চিন্তিত মুখে হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারের সামনে পায়চারী করছেন। তার সন্তানকে অপারেশন করতে নিয়ে গেছে প্রায় ছয় ঘণ্টা হয়েছে। লাগার কথা একঘণ্টা। একজন ডাক্তার বেড়িয়ে এসে বললেন, “কিছু সমস্যা হয়েছে। আপনার সন্তানের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গেছে।” তখন চৌধুরী সাহেব হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন, “ডাক্তার সাহেব! আমার ছেলেকে বাঁচান। যত টাকা লাগে আমি দেব। আমার ছেলেকে বাঁচান প্লিজ, আপনার পায়ে পড়ি।” ডাক্তার বললেন, “চিন্তা করবেন না। এই ব্যাপারে আমাদের থেকে অভিজ্ঞ ডাক্তার আর দেশে কেউ নেই। আমরা না পারলে, আর কেউ পারবে না। ধৈর্য ধরুন।” তিন ঘণ্টা পর চৌধুরী সাহেবকে জানানো হলো, গুরুতর ইনফেকশনের কারণে তার সন্তান মারা গেছেন।

চৌধুরী সাহেব শোকে বোবা হয়ে গেলেন। তিনি ঘরে নিজেকে বন্দি করে চরম ডিপ্রেশনে ভোগেন, আর আনমনে বিড়বিড় করেন, “কেন আমার সাথে এমন হলো? আমি কী দোষ করেছিলাম? আমি তো সব চেষ্টাই করেছিলাম? সবচেয়ে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছিলাম। সবচেয়ে দামি ডাক্তার ধরেছিলাম। আমার তো চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না? কেন? কেন আমার সাথে এমন হলো?” তিনি ভুলে গিয়েছিলেন—

আল্লাহ ছাড়া তোমাদেরকে রক্ষা করার কেউ নেই, সাহায্য করারও কেউ নেই।

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, ডাক্তাররা আমাদেরকে বাঁচান না। আল্লাহ تعالىআমাদেরকে বাঁচান। তিনি আমাদেরকে সাহায্য না করলে কারো কোনো ক্ষমতা নেই আমাদেরকে সাহায্য করার। আল্লাহ تعالى আমাদেরকে রক্ষা না করলে, আমাদের বিপদে মামা, চাচা, খালু, পুলিশ, এলাকার চেয়ারম্যান সাহেব, হাজি সাহেব কেউ আমাদেরকে রক্ষা করতে পারবে না। আর আল্লাহ تعالى যদি আমাদেরকে রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে এলাকার মাস্তান, অফিসের শয়তান কলিগ, ব্যবসার শত্রু পার্টনার, দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের জাদুটোনা, রাজনৈতিক দলের ক্যাডার — কেউ আমাদেরকে কিছুই করতে পারবেন না।

যারা আল্লাহর تعالى উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারে, তারা কখনো কারো ভয়ে থাকে না। কোনো দুর্ঘটনায় হতাশ হয় না। দিনরাত খারাপ কিছু ঘটার আতঙ্কে থাকে না। অমূলক ভয়ভীতি এবং নেতিবাচক চিন্তার প্রভাব থেকে তারা মুক্ত। অমূলক ভয়, হতাশা, আতঙ্ক —এগুলো সবই পরিস্কার লক্ষণ যে, সে এখনো আল্লাহর تعالى উপর পুরোপুরি ভরসা করতে পারেনি। এখনো সে আল্লাহর تعالى থেকে অন্য কোনো মানুষ বা বস্তুর উপর অনেক বেশি নির্ভর করে।

আল্লাহর تعالى উপরে যারা পুরোপুরি নির্ভর করতে পারে, তারা গাজার বোনদের মত নিশ্চিন্তে হিজাব পড়ে রাতে ঘুমাতে যান। কারণ তারা মেনে নিয়েছেন: আল্লাহ تعالىযদি চান, তাহলে আজকে রাতেই সে শহিদ হবে। তখন উদ্ধারকারীরা যেন তাকে বেপর্দা অবস্থায় দেখে না ফেলে। তারা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে বাইরের পোশাক পরিয়ে, পকেটে খাবার গুঁজে দিয়ে বিছানায় শোয়ান। হয়ত আজকে রাতেই তার সন্তানরা একা একা রাস্তায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পড়ে থাকবে। আগামীকালকে থেকে মা ছাড়া জীবন পার করতে হবে। তাই তারা প্রস্তুত। ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই, সবই আল্লাহর تعالى ইচ্ছে। আল্লাহ تعالى যখন চাইবেন, তখন তা হবেই। এই ধরনের মুমিনদের কখনো চাকরি নিয়ে স্ট্রেস, প্রেমে বিফলতার কারণে ডিপ্রেশন, অপারেশনের আতঙ্কে রাতে ঘুম না হওয়া, ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে হাইপার টেনশন, উচ্চ রক্তচাপ —এই সব আহ্লাদী অসুখ হয় না। এগুলো সব আমাদের মত নড়বড়ে ঈমানের মানুষদের সমস্যা।

আরেকটি উদাহরণ দেই—

মুখলেস সাহেব বহুদিন ধরে চেষ্টা করছেন একটা ব্যবসা ধরার। তিনি তার জমি জমা বিক্রি করে মূলধন যোগাড় করেছেন। মন্ত্রীকে টাকা খাইয়েছেন। কিন্তু তারপরেও ব্যবসাটা পাওয়ার খুব একটা আশা দেখা যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত তিনি মিরপুরে পীরের কাছে গেলেন। তার পায়ে ধরে বললেন, “পীর সাহেব, আপনার পায়ে পড়ি। আমার এই ব্যবসাটার ব্যবস্থা করে দেন। আমি আমার জমিজমা সব বিক্রি করে ফেলেছি। এই ব্যবসাটা না হলে আমি পথে বসবো। আমাকে বাঁচান!”

পীর বললেন, “চিন্তা করো না বাবা। পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে যাও। আমি তোমার হয়ে একশ মানুষ ডেকে দোয়ার মাহফিল করব, মিলাদ করব, গরিবদের খাওয়াবো। এত বড় নেক কাজের উছিলায় তোমার চাওয়া মঞ্জুর হয়ে যাবেই।” চৌধুরী সাহেব তার পরিবারের শেষ সঞ্চয় এক লাখ টাকা সহ আরও চার লাখ টাকার লোণ নিয়ে পীর সাহেবকে দিয়ে দিলেন। এক মাস পর ব্যবসাটা হারিয়ে, লোণে জর্জরিত হয়ে, তার পরিবারকে নিয়ে পথে বসলেন। তিনি ডিপ্রেশনে ডুবে গেলেন। তার মনের মধ্যে একটা চিন্তাই ঘুরপাক খায়, “কেন আমার সাথে এমন হলো? আমি কী দোষ করেছিলাম? আমি তো চেষ্টার কোনো ত্রুটি করিনি। পীর ধরার পরেও কেন কিছুই হলো না?” তিনি মনে রাখেননি—

তুমি কি জানো না: সবগুলো আকাশ এবং পৃথিবীর অধিপতি একমাত্র আল্লাহ? আল্লাহ ছাড়া তোমাদেরকে রক্ষা করার কেউ নেই, সাহায্য করারও কেউ নেই?

আমরা যদি এই আয়াত নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, আমরা দেখব, আমাদের অনেক মানসিক সমস্যার সমাধান রয়েছে এই আয়াতে। আজকের যুগে Stress বা মানসিক চাপ থেকে অশান্তি, ডিপ্রেশন, Anxiety বা অনিশ্চয়তার ভয় — এগুলোর সবকিছুর কারণ আল্লাহকে تعالى ভুলে যাওয়া। আল্লাহর تعالى উপর ভরসা করতে না পারা। আল্লাহর تعالى উপর নিজের ভবিষ্যতকে সঁপে দিতে না পারা। ভালো মন্দ যাই হোক না কেন, আল্লাহর تعالى সিদ্ধান্তকে মেনে না নেওয়া। আল্লাহর تعالى কাছে এমনভাবে দাবি করা, কৈফিয়ত চাওয়া, যেভাবে মানুষের কাছে আমরা দাবি করি, অভিযোগ করি। —এগুলো সবই আমাদের নানা ধরনের মানসিক সমস্যার মূল কারণ।

আসুন দেখি কীভাবে এগুলো থেকে দূরে থাকা যায়—

Stress বা মানসিক চাপ থেকে অশান্তি

স্ট্রেস হচ্ছে আধুনিক যুগের এক মহামারি। এর থেকে পেপ্টিক আলসার, হার্টের অসুখ, ডিপ্রেশন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, গ্যাস্ট্রিক, হাইপার টেনশন, ডায়াবিটিস এমনকি কিছু বিশেষ ক্যান্সারও হয়। মানুষ যখন স্ট্রেসে ভোগা শুরু করে তখন প্রথমে অস্থিরতা, অল্পতে রেগে যাওয়া, বাড়িতে-স্কুলে-অফিসে মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করা শুরু হয়। তারপর মাথা ব্যাথা, হজমে সমস্যা, রাতে ঠিকমত ঘুমাতে না পারা, মোটা হয়ে যাওয়া শুরু হয়। বছরের পর বছর ক্রমাগত স্ট্রেস চলতে থাকলে একসময় জটিল সব অসুখ শুরু হয়।[২১৩]

মানুষ যখন স্ট্রেসে থাকে, তখন তার শরীরে এড্রেনালিন হরমোন মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে বের হতে থাকে। এই হরমোনটা মানুষকে দেওয়া হয়েছে বিপদের সময় যেন মানুষ অতিরিক্ত শারীরিক ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারে। এই হরমোন বের হলে মানুষের রক্ত চাপ বেড়ে যায়। হৃদপিণ্ড স্বাভাবিকের থেকে বেশি জোরে চলতে থাকে। রক্তে গ্লুকোজ, চর্বি বেশি জমা হয়। এগুলো সবই দরকার বিপদের মুহূর্তে হঠাৎ করে বেশি শক্তির পাওয়ার জন্য, যাতে করে দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়। কিন্তু এই হরমোন মানুষের রক্তে বেশিক্ষণ থাকলে তা অঙ্গগুলোকে নষ্ট করে দিতে থাকে। এড্রেনালিন হরমোন অল্প সময়ের জন্য শরীর সহ্য করতে পারে। কিন্তু স্ট্রেসে ভোগা মানুষের শরীরে প্রায় সবসময়ই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে এড্রেনালিন থাকে, যার কারণে তার ভেতরের জরুরি অঙ্গগুলো দ্রুত নষ্ট হতে থাকে।[২১১]

যখন মানুষ স্ট্রেসে ভোগে, তখন তার বেশ কিছু রক্তনালি সঙ্কীর্ণ হয়ে যায়। যার ফলে অনেক অঙ্গে রক্ত চলাচল কমে যায়। এখন বিপদের সময় সেই সব অঙ্গে রক্ত কম গেলে সমস্যা নেই। কিন্তু সবসময় যখন সেই জরুরি অঙ্গগুলো রক্ত কম পেতে থাকে, তখন সেগুলো দ্রুত নষ্ট হতে থাকে।[২১৩]

স্ট্রেসে থাকলে মানুষের মস্তিষ্কে কর্টিসল নামে একটি কেমিক্যাল বের হয়, যা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যার ফলে স্ট্রেসে ভোগা মানুষ অল্পতেই অসুখে ভোগেন। স্বাভাবিকের থেকে কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকার কারণে অল্পতেই ইনফেকশনের ফলে তার নানা ধরনের ইনফেকশন জনিত অসুখ হয়। আর কোনো ধরনের ঘা হলে, তা শুকাতে বেশি সময় লাগে।[২১২]

স্ট্রেসে ভুগলে মানুষের শরীরে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত ইনসুলিন বের হয়। যার ফলে রক্তে অতিরিক্ত ইনসুলিন জমা হতে থাকে। যার থেকে হার্টের অসুখ হয়। দিনরাত ইনসুলিন বেশি পরিমাণে বের হলে দ্রুত ডায়াবিটিস হয়। আর হলেও সেটা হয় ভয়াবহ আকারে।[২১৩]

স্ট্রেস হওয়ার মূল কারণগুলো হলো[২১৪]—

  • অজানাকে, অনিশ্চয়তাকে ভয় পাওয়া, এবং নিজের ভবিষ্যৎকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সবসময় চেষ্টা করা।
  • অমূলক ভয়ভীতি এবং নেতিবাচক চিন্তায় আসক্ত থাকা।
  • প্রিয়জনকে হারানোর কষ্ট, অনিশ্চয়তায় ডুবে যাওয়া।
  • সত্যকে মেনে নিতে না পারার জন্য নিজের ভেতরে দ্বন্দ্ব তৈরি করা। সত্যকে মেনে নেয়ার জন্য নিজের ভেতরে যে পরিবর্তন আনতে হবে, যে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, সেটা করতে না পারার কারণে নিজের সাথে যুদ্ধ করা।

এগুলোর সমাধান খুব সহজ। অজানা, অনিশ্চয়তাকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আল্লাহ تعالى আপনার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, সেটা হবেই। আপনি আপনার সাধ্যমত চেষ্টা করুন। ফলাফল সম্পূর্ণ আল্লাহর تعالى হাতে। এরকম কখনই হবে না যে, আল্লাহ تعالى চেয়েছিলেন একটা, কিন্তু আপনি এমন কঠিন পরিশ্রম করলেন যে, আপনার চেষ্টার চোটে আপনি যা চাচ্ছিলেন সেটাই হলো। আপনি আল্লাহর تعالى উপর জিতে গেলেন। এরকম কখনই হবে না। তাহলে দিনরাত খাওয়া, ঘুম নষ্ট করে, নামাজ না পড়ে; পরিবার, প্রতিবেশী এবং আত্মীয় সম্পর্ক খারাপ করে, নিজের জীবনটাকে শেষ করে কী লাভ?

ডিপ্রেশন বা জটিল ধরনের অবসাদ, হতাশা

ডিপ্রেশন মানে শুধু কিছু দিনের জন্য মন খারাপ, হতাশা, ক্লান্তি, অবসাদ নয়। বরং ডিপ্রেশন হচ্ছে এমন এক জটিল অসহায়বোধ, হতাশা, অবসাদ, যা মানুষের দেহ, মন, কাজে, চিন্তাভাবনায় ব্যাপক খারাপ প্রভাব ফেলে এবং সেটা বহুদিন ধরে চলতে থাকে।[২১৫] ডিপ্রেশন হওয়ার কিছু শারীরিক কারণ রয়েছে, যার কারণে কিছু মানুষ জন্ম থেকেই ডিপ্রেশনে ভোগেন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ ডিপ্রেশনে ভোগেন তার অসুস্থ দৃষ্টিভঙ্গি, নেতিবাচক চিন্তাভাবনা, জীবনের চাহিদার প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ, কিছু না পাওয়ার দুঃখ সামলাতে না পারা, প্রিয়জনকে হারানোর কষ্টে অতিরিক্ত ডুবে যাওয়া, অতিরিক্ত কাজের চাপ ইত্যাদি কারণে।

আজকালকার আধুনিক সংস্কৃতিতে মগজ ধোলাই হওয়া কিশোর, তরুণদের মধ্যে ডিপ্রেশন এক মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। এই সংস্কৃতি মানুষকে আল্লাহর تعالىউপরে নির্ভর করা, তাঁর সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং তার ভিতরে আত্মকেন্দ্রিকতা এবং নিজের চাওয়া-পাওয়াকে যেভাবেই হোক পেতেই হবে — এমন একরোখা মানসিকতা তৈরি করে। যার ফলাফল: মানুষ ঘন ঘন ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হচ্ছে।

প্রিয়জনকে হারানোর বেদনায় অনেকে শোকে পঙ্গু হয়ে যান। মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর তাদেরকে একই কথা বলতে শোনা যায়, “আহারে, আমার বোনটা কী ভালো ছিল। আজকে যদি ও বেঁচে থাকত, কী খুশিটাই না হতো। আজকে ও থাকলে, এই মাছটা কী মজা করেই না খেত। আজকে ও থাকলে, আমাদের জীবনটা কত সুন্দর হতো। আজকে ও থাকলে, আমার সাথে এটা হতেই দিত না।…” — কী সব ভয়াবহ কথা ভাবি আমরা!

প্রথমত, কে কবে মারা যাবে, সেটা সম্পূর্ণ আল্লাহর تعالى ইচ্ছা এবং পূর্ব নির্ধারিত। আমরা কারও মৃত্যুর দিন একদিনও আগাতে পারি না, একদিনও পিছাতে পারি না। “আজকে ও বেঁচে থাকলে” — এধরনের কথা বলার অর্থ এটাই যে, আমরা কদরে বিশ্বাস করি না। কদরে বিশ্বাস ঈমানের একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। আমরা কখনই মুমিন হতে পারবো না, যদি কদরে আমাদের শক্ত বিশ্বাস না থাকে। তখন নড়বড়ে ঈমান নিয়ে খারাপ কিছু ঘটলেই ডিপ্রেশনে ডুবে যাব। অল্পতেই স্ট্রেসে ভুগতে থাকব। হাইপার টেনশন, ডায়াবিটিস, হার্টের অসুখে ধুঁকে ধুঁকে জীবনটা শেষ করব।

দ্বিতীয়ত, আমরা কেউ কারো অভিভাবক নই। আমি আমার পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখি না, তাদের সংস্থান যোগাড় করি না, তাদের দেখাশোনা করি না। আল্লাহ تعالى করেন। আল্লাহ تعالى তাঁর প্রতিটা সৃষ্টির রিজিকের (সংস্থানের) মালিক।

তিনিই তো আল্লাহ تعالى, যিনি ওদেরকে এবং তোমাকে খাওয়ান। তিনি সব শোনেন, সব ব্যাপারে সব কিছু জানেন। [আল-আনকাবুত ২৯:৬০]

আমরা কিছুই না, একটা উছিলা মাত্র। আল্লাহ تعالى যদি আমার স্ত্রী, সন্তানের জন্য রিজিকের ব্যবস্থা করে রাখেন, তাহলে আমি বেঁচে থাকলেও সেটা হবে, আমি কালকে মারা গেলেও সেটা হবে। এখানে আমি কিছুই না। “আমি মারা গেলে আমার পরিবার পথে বসবে। আমার মেয়েদের বিয়ে কে দেবে? আমার স্ত্রী, সন্তানকে আমার শয়তান ভাই-বোনরা পথে বসিয়ে দেবে”— এইসব ফালতু চিন্তা এবং মানসিক অশান্তিতে মুমিনরা কখনো ভোগে না। কারণ একজন মুমিন খুব ভালভাবে উপলব্ধি করে—

তুমি কি জানো না যে, সবগুলো আকাশ এবং পৃথিবীর অধিপতি একমাত্র আল্লাহ? আল্লাহ ছাড়া তোমাদেরকে রক্ষা করার কেউ নেই, সাহায্য করারও কেউ নেই?

কু’রআনে শুধু এই একটি আয়াত নয়, এরকম আরও অনেক আয়াত রয়েছে, যা আমাদেরকে স্ট্রেস, ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে—

চারিদিকে এত কষ্ট, এত কান্না — ভাবছেন আপনার কী দোষ?

তিনিই সেই সত্তা, যিনি মানুষকে হাসান এবং কাঁদান। তিনিই তো মৃত্যু দেন, জীবন দেন। [আন-নাজম ৫৩:৪৩]
তারা কি লক্ষ্য করে দেখে না যে, প্রতিবছর তাদের উপর দুই-একবার বিপদ আসছে? এরপরও ওরা তওবাহ করে না, উপলব্ধি করার চেষ্টা করে না। [আত-তাওবাহ ৯:১২৬]

জীবনটা অতিরিক্ত কষ্টের মনে হচ্ছে? আর পারছেন না সহ্য করতে?

আল্লাহ تعالى কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা কখনো দেন না। প্রত্যেকেই যা ভালো করেছে তার পুরস্কার পায়, যা খারাপ করেছে তার পরিণাম ভোগ করে। [আল-বাক্বারাহ ২:২৮৬]

জীবনটা শুধুই কষ্ট, আর কষ্ট? কোনো ভালো কিছু নেই?

প্রতিটি কষ্টের সাথে অবশ্যই অন্য কোনো না কোনো দিক থেকে স্বস্তি রয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই, অবশ্যই প্রতিটি কষ্টের সাথে অন্য দিকে স্বস্তি আছেই। [আল-ইনশিরাহ ৯৪:৫-৬]

আপনার বাবা প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে হঠাৎ বিছানায় পড়ে গেলেন? দেখবেন আপনার ভাই নিজেই মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করে ভালো ফল করছে। একইসাথে আপনার মা হিন্দি সিরিয়াল দেখা বাদ দিয়ে স্বামীর সেবা করছে।
আপনি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে চাকরি হারিয়ে ফেললেন? দেখবেন আপনার তরুণ ছেলেটা আরও বেশি সময় ঘরে থেকে বখাটে ছেলেদের সাথে মেশা কমিয়ে দিয়েছে, নিজেই চাকরির খোঁজ করছে। একইসাথে আপনার স্ত্রী হঠাৎ করে নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করেছে।
এই আয়াতে আল্লাহ تعالى গ্যারান্টি দিয়েছেন যে, প্রীতিটি কষ্টের সাথে জীবনের অন্য কোনো না কোনো দিকে কমপক্ষে দুটো স্বস্তি আসবেই।

দেশে অরাজকতা, অশান্তি, অপরাধ দেখে সবসময় অকালে মৃত্যুর ভয়ে আছেন? ভাবছেন বিদেশে চলে যাবেন?

তুমি যেখানেই যাও না কেন, মৃত্যু তোমাকে ধরবেই। তুমি যদি অনেক উঁচু দালান বানিয়েও থাকো। [আন-নিসা ৪:৭৮]
বলো, “তোমরা যদি নিজেদের ঘরের ভিতরেও থাকতে, যারা খুন হবে বলে নির্ধারণ করা হয়েছিল, তারা নিজেরাই বের হয়ে নিজেদের মৃত্যুর সাথে দেখা করতে যেত।” [আলে-ইমরান ৩:১৫৪]

আপনার কোনো নিকটজন অকালে প্রাণ হারালেন আর আপনি ভাবছেন— হায়, যদি সে অমুক করত, অমুক না করত, তাহলে সে বেঁচে যেত?

তোমরা যারা বিশ্বাস করেছ বলে দাবি করো, ওই সব কাফিরদের মতো হয়ো না, যারা তাদের ভাইদের সম্পর্কে বলে (যখন তারা `ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়েছিল, ভ্রমণে গিয়েছিল) “হায়রে, যদি তারা আমাদের সাথে থাকতো, তাহলে তারা মারা যেত না, খুনও হতো না।” আল্লাহ تعالى এই ধরনের চিন্তাভাবনাকে তাদের অন্তরে তীব্র মানসিক যন্ত্রণার উৎস করে দেন। শুধুমাত্র আল্লাহই تعالى প্রাণ দেন, মৃত্যু ঘটান। তোমরা কী করো, তার সব তিনি দেখছেন। [আলে-ইমরান ৩:১৫৬]

অমুকের এত বাড়ি-গাড়ি-টাকা দেখে ভাবছেন, কেন তার মতো এমন নামে-মুসলিম কাজে-কাফিরের জীবন এত আরামের?

ওদের এত ধনসম্পত্তি, সন্তানসন্ততি তোমাকে অবাক করতে দিয়ো না। এগুলো দিয়ে আল্লাহ تعالى শুধুমাত্র ওদেরকে এই দুনিয়াতে পরীক্ষা নিতে চান, যেন তাদের আত্মা কাফির অবস্থায় এখান থেকে চিরবিদায় নেয়। [আত-তাওবাহ ৯:৮৫]

চাকরি হারিয়ে আপনার মাথায় হাত: কেন আপনার সাথে এমনটা হলো? কেন আপনার সন্তান এত গুরুতর অসুস্থ হলো? কেন আপনার বাবা এই দুঃসময়ে মারা গেলেন?

আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, সম্পত্তি, জীবন এবং ফসল হারানো দিয়ে পরীক্ষা করবই। জীবনে কোনো বিপদ আসলে যারা ধৈর্যের সাথে চেষ্টা করে এবং বিপদে পড়লে সাথে সাথে বলে, “আমরা তো আল্লাহরই সম্পত্তি। আল্লাহরই কাছে আমরা শেষ পর্যন্ত ফিরে যাবো” — তাদেরকে সুসংবাদ দাও! ওদের উপর তাদের প্রভুর কাছ থেকে আছে বিশেষ অনুগ্রহ এবং শান্তি। এধরনের মানুষরাই সঠিক পথে আছে। [আল-বাক্বারাহ ২:১৫৫-১৫৭]
মনে রেখ, তোমার যা ধনসম্পদ আছে এবং তোমার সন্তানরা, এগুলো শুধুই তোমার জন্য পরীক্ষা ছাড়া আর কিছু নয়। আর মনে রেখ, আল্লাহর تعالى কাছে রয়েছে অপরিসীম পুরস্কার। [আল-আনফাল ৮:২৮]
তারা কি লক্ষ্য করে দেখে না যে, প্রতিবছর তাদের উপর দুই-একবার বিপদ আসছে? এরপরও ওরা তওবাহ করে না, উপলব্ধি করার চেষ্টা করে না। [আত-তাওবাহ ৯:১২৬]

বার বার কেন আপনার জীবনেই এত কষ্ট আসছে? কেন আল্লাহ تعالى এমন করছেন আপনার সাথে?

মানুষ কি ভেবেছে যে, তাদেরকে কোনো পরীক্ষা না করেই ছেড়ে দেওয়া হবে, কারণ তারা মুখে বলছে, “আমরা তো মুমিন!” [আল-আনকাবুত ২৯:২]
তোমরা কি ভেবেছিলে যে, তোমাদের মধ্যে থেকে কারা আল্লাহর تعالى পথে আপ্রাণ চেষ্টা করে এবং কারা ধৈর্যের সাথে চেষ্টা করে — সেটা আল্লাহ تعالى প্রকাশ না করে দেওয়ার আগেই তোমরা জান্নাত পেয়ে যাবে? [আলে-ইমরান ৩:১৪২]
যে-ই আমার পথনির্দেশ থেকে দূরে চলে যাবে, তার জীবন হয়ে যাবে ভীষণ কষ্টের। [ত্বাহা ২০:১২৪]

অশান্তিতে ছটফট করছেন? রাতে ঘুমাতে পারছেন না? ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন? ওষুধ খেয়েও মনে শান্তি আসছে না?

যাদের ঈমান আছে, তারা যখন আল্লাহর تعالى কথা ভাবে, যিকির করে, তখন তাদের মন শান্তি খুঁজে পায়। মনে রেখ, আল্লাহর تعالى কথা ভাবলে, যিকির করলে, অবশ্যই মন শান্তি খুঁজে পাবেই। [আর-রাদ ১৩:২৮-২৯]
তোমরা যারা বিশ্বাস করেছ, ধৈর্যের সাথে চেষ্টা কর, এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর تعالى কাছে সাহায্য চাও, কারণ আল্লাহ تعالى তাদের সাথে আছেন, যারা ধৈর্যের সাথে চেষ্টা করে। [আল-বাক্বারাহ ২:১৫৩]

আসুন আমরা কু’রআনের আয়াতগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি। আল্লাহ تعالىআমাদেরকে কু’রআন দিয়েছেন এক আত্মিক নিরাময় হিসেবে। আমাদের অনেক মানসিক সমস্যার সমাধান রয়েছে কু’রআনে। নিয়মিত বুঝে কু’রআন পড়লে আমরা খুব সহজেই ওষুধের উপর আমাদের নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারব, স্ট্রেস-ডিপ্রেশন থেকে মুক্ত হয়ে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সুস্থ জীবন যাপন করতে পারব — ইন শাআ আল্লাহ।

Collected from Facebook page