এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য | Post 7
24. এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য
প্রিয় মা,
কেমন আছো তুমি ?? ভালো আছো নিশ্চয় ?? আমার কথা মনে আছে তোমার বা মনে পড়ে ?? আমার কিন্তুতোমার কথা মনে পড়ে বিষণ মনে পড়ে তুমি ভাবতে পারবে না আমি তোমাকে কতটুকু ভালোবাসি তোমার চেহারা আমার মনে নেই তোমার কোন কিছু মনে নেই তারওপর তোমার কোন ছবি ও আমার কাছে নেই, থাকবে কোথা হতে আমি তো জন্মের পর হতে তোমাকে দেখি নাই মা বলে যে ডাকবো সেই সুযোগ টুকু তুমি আমায় দিলে না, তারপর ভাবলাম মা বলতে পারলাম না বাবা কে মা বাবা দুটায় ডাকবো কিন্তু সেইটা ও ভাগ্যে জুটলো না তুমি চলে যাবার পর বাবা ও ঐ তোমার পথ ধরলো আমি পুরোপুরি একা হয়ে গেলাম ভাগ্য ভালো দাদী বেঁচে ছিলো না হলে তো আমার কি হত ভাবতে গেলে গাঁ শিউরে উঠে , তাই এখন আর ভাবি না কিছুই ভাবি না, আমার সব কিছু এখন আমার পুরো পৃথিবী একজন মানুষ কে ঘিরে সেই একজন আমার দাদী। তোমার চলে যাবার পর দাদী আমাকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করছে এই মহান নারীর কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ, সে না থাকলে আমি এই পর্যন্ত বা এখন এই খানে লিখতে পারতাম না…
তবে তুমি এইটা মনে করোনা তোমাকে আমি ভুলে গেছি আমি তোমাকে ঠিকই মনে করি আগে ছোট বেলায় যখন স্কুলে যেতাম তখন দেখতাম সবার মা তাদের সন্তান কে কত আদর করে, কত কিছু কিনে দেয় কত আবদার রাখে, কোলে তুলে নিয়ে কপালে চুমু দেয়, আমি এই সব দৃশ্য গুলো শুধু তাকিয়ে দেখতাম তারপর রেজাল্টের দিনে সবার মা আসতো শুধু আমি ক্লাসে একমাত্র ছেলে ছিলাম যার কেউ আসতো না তাই আমাদের স্কুলের সিস্টার যখন আমার রোল কল করতো তখন বলতো আচ্ছা তোর রেজাল্টকার্ড আমি নিলাম আমি তোর মা তখন আমাকে সে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করতো আমি সিস্টার কে জড়িয়ে কেঁদেদিতাম তখন সিস্টার আমাকে চকলেট দিতো কেক খেতে দিতো,আর বলতো একদম কাঁদবি না তোর মত আমার ও মা ছিলো না এখন ও নেই তাই বলে আমি কী কাঁদছি গাধা, আমার চোখ মুছিয়ে দিয়ে আমাকে বলতো বাসায় যা গিয়ে দাদী কে রেজাল্ট কার্ড দেখা যা, আর দুষ্টামি না করে ঠিকমত পড়বি কেমন… আমি তখন বাসায় এসে দাদীর হাতে রেজাল্ট কার্ড দিয়ে ঘরে বসে কাঁদতাম আর চিন্তা করতাম তুমি যদি থাকতে তাহলে কি আজ আমার সাথে যেতে না ??
আমি পাশ করেছি দেখলে তুমি খুশী হয়ে আমাকে আদর করতে না ??
আমাকে কোলে নিয়ে কপালে চুমু খেতে না বলো ??? আমাকে চকলেট কিনে দিতে না ??? এই ভাবে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যেতাম আমি, আবার অনেক অনেক রাত জেগে পার করে দিতাম , তুমি থাকলে কি করতে আমি তোমার সাথে কি কি করতাম তুমি আমাকে দুষ্টামি করার জন্য মারতে নাকি আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে নাকি, এই রকম অনেককিছু ভাবতে ভাবতে…………।
কিন্তু মাঝে মাঝে সমস্যা হয় তোমার সাথে কথা বলতে মেঘে ঢেকে যাই তখন তোমাকে পাইনা কালরাতে তোমাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি মেঘে ঢেকে ছিলো সারারাত তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি খুঁজে পাইনি তোমায়,তাই বাধ্য হয়ে লিখতে বসলাম… আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মা অনেক, তবে একটা অভিমান তোমার উপর আছে সেটা হল, তুমি আমাকে মা ডাকার সুযোগ দাওনি, আজ পর্যন্ত আমি মা এই মধুর ডাকটা ডাকতে পারিনি,আর একটা অভিমান আছে তোমার জন্য মানুষ আমাকে করুনার চোখে দেখে এই জিনিসটা আমার অনেক বিরক্ত আর কষ্ট দেয় ।
তুমি যেখানে থাকো যেভাবে থাকো ভালো থেকে সুখে থেকো,আর যেন রেখো আমি তোমাকে ভালোবাসি আর অনেক মিস করি আর তুমি আমাকে নিয়ে একদম চিন্তা করবে না আমি এখন আর কাঁদি না এখন চোখের পানি সব শুকিয়ে গেছে , আবার ও বলি ভালো থেকো মা…………
লিখেছেন-শুভ্র শামীম
25. এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য
স্বামীকে হারানোর পর থেকে এক ছেলে অন্তুকে নিয়েই জয়ার পৃথিবী। ছেলে আজ অনেক বড়, বিদেশে থাকে, বড় চাকরি করে। কয়েক বছর হল বিয়ে করেছে এক বিদেশী বাঙ্গালি মেয়েকে। স্বামীর করে যাওয়া দোতলা বাড়িতে বসবসা জয়ার। জয়া প্রায়ই যেত ছেলের কাছে, অন্তুও আসতো। ছেলের বিয়ের পর থেকে যাওয়া আসা অনেক কমে গেছে। অন্তু বলে-
-অনেক কাজ মা, কি করে আসি বল? তার উপর আসা যাওয়ার খরচও তো বেস। -তাহলে আমি আসি? -তোমার ও তো বয়স হয়েছে, এত জার্নি না করাই ভালো। এর এখানের ওয়েদার ও তো তোমার সুট হয়না। -হুম, ঠিকই বলেছিস। ঠিক আছে সময় হলে আসিস। -মন খারাপ করনা মা। আমি আসবো।
ছেলের আসার অপেক্ষায় থাকে জয়া। অন্তুর চাচাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে চলে যেতে বাধ্য হয় এক সময় জয়া।
-ভাবী এই ঠিকানায় চলে যাও, তোমার কোন অসুবিধা হবেনা।
কথাটা বলে জয়ায় হাতে এক টুকরো কাগজ গুজে দেয় অন্তুর চাচা। কাগজটা হাতে নিয়ে কিছুনা বলেই হাঁটা দেয় জয়া। খুব ইচ্ছে করছিলো একবার পিছনে ফিরে বাড়িটা দেখার কিন্তু যাওয়াটা হয়তো কঠিন হয়ে যাবে ভেবে একবারও পিছনে ফিরে তাকালোনা সে। বেস কিছুদূর গিয়ে অন্তুকে ফোন করলো।
-বাবা কেমন আছিস? -ভালো মা। তুমি? -আমাকে নিয়ে যাবি তোর কাছে? -কেন, কি হয়েছে? -কিছু না হলে কি নিবিনা? -তা না মা, আসলে এইখানে সবাই এত ব্যাস্ত। জানতো মা এইখানে বেশির ভাগ বাবা-মা ই ওল্ড হোম এ থাকে।
জয়া ফোনটা কেটে দিল। অন্তু আরও দু-তিনবার ফোন দিল কিন্তু জয়ার কথা বলতে ইচ্ছা করলনা তাই ফোনটা ধরেনি। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ যেন সামনে ঝাপসা দেখছে সব কিছু। মনে হয় মাথাটা ঘুরছে তার। হাতের ব্যাগটা পড়ে যাচ্ছিলো এমন সময়-
-মা কি হয়েছে আপনার? শরীর খারাপ লাগছে?
একপাশে বসে পড়লো জয়া। একটু পানি খেয়ে নিয়ে নিজেকে সামলে নিলো। পাশে ফিরে দেখে অন্তুর বয়সী এক ছেলে দাঁড়িয়ে।
-কে তুমি বাবা? -আমার নাম রাফি। আপনি কি অসুস্থ? কোথায় যাবেন বলেন আমি সাহায্য করছি।
রাফিকে দেখে অন্তুর কথা আবারো খুব করে মনে পড়লো জয়ার। রাফির হাতে টুকরো কাগজটা দিয়ে-
-এইখানে যেতে বললও। -কে যেতে বলেছে এইখানে? আপনার ছেলে না মেয়ে? জয়া হাঁসে- এক ছেলে আছে...না না ছিল। এখন বিদেশে থাকে, খুব ব্যাস্ত। -আপনি কি এই ঠিকানায় যেতে চান? -না, কখনো না। অন্তুর বাবা সব সময় বলত “শোন কেউ যদি তোমাকে বৃদ্ধাশ্রম এ যেতে বলে তাকে বলে দিয়ো যে আমিই তোমাকে দেখবো সারা জীবন। তুমি কোন দিনও একা হবেনা।”
জয়ার চোখে পানি, কিন্তু সেটা কষ্টের নাকি খুশির তা অন্তু বুঝেনা। রাফির খুব খারাপ লাগে জয়ার জন্য।
-বাবাকে হারিয়েছি অনেক ছোট থাকতে আর কিছুদিন আগে হারালাম মা কে। আপনি আমার সাথে যাবেন প্লিজ। -আমি তোমাকে চিনিনা, তুমিও আমাকে চেননা। কিভাবে বিশ্বাস করছো আমাকে? -মাকে অবিশ্বাস করা যায় না তাই। -শেষ পর্যন্ত আমি পালিত মা! -মা শব্দটার ভার অনেক তাই এর সাথে অন্য কোন বিশেষণ ঠিক মানায় না। মা শুধুই মা।
রাফির সাথে বেস ভালই কাটছিলো জয়ার দিনকাল। রাফিও জয়াকে নিজের মায়ের মত শ্রদ্ধা করতো। অন্তুকে ফোন করে জানিয়ে দিল যে জয়া একটি বৃদ্ধাশ্রম এ বেস ভালো আছে। অন্তুও খুশি হল, জয়াও খুশি...হয়তো।
-গল্পটি লিখেছেন #সাজিয়া