মিথ্যা অপবাদে জেলে গেলেন আল্লাহর নবী
মিথ্যা অপবাদে জেলে গেলেন আল্লাহর নবী
আল্লাহর নবী হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজকের আধুনিক মিসরেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। কেনান নামক স্থানে। যার বর্তমান নাম নাবলুস। জেরুজালেমের ত্রিশ মাইল উত্তরে অবস্থিত । মায়ের নাম রাহিল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তাঁর পিতাও ছিলেন একজন নবী নাম হলো হযরত ইয়াকুব আলাইহি ওয়াসাল্লাম । তাঁর পিতা ছিলেন হযরত ইসহাক আলাইহি ওয়াসাল্লাম । আর তাঁর পিতা ছিলেন হযরত ইব্রাহীম আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিনি ছিলেন মানুষের নেতা। নবী মানে হলো সংবাদ বাহক । যারা আল্লাহর নির্দেশিত পথ মানুষদেরকে বাতলে দেন। পরিচালনা করেন হিদায়েতের পথে। তাদেরকেই বলা হয় নবী ।
তাই নবীদের একমাত্র কাজই হলো মানুষদেরকে সরল-সঠিক ও আলোর পথে পরিচালনা করা। নবীরা হলেন নিষ্পাপ । মাছুম ও নিষ্কলুষ। তাদেরকে ছুঁতে পারে না পাপ-পঙ্কিলতা ও গুনাহর কাজ। তাদের জীবন চরিত্র হয় পুত-পবিত্র। চরিত্র মাধুর্য হয় উন্নত । ব্যতিক্রম ছিলোনা হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন চরিত্রও।
হযরত ইউসুফের আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলো আরো এগারো ভাই। তাঁর মধ্যে বিন ইয়ামিন আপন ভাই এবং অন্যরা ছিলো সৎ ভাই। সৎভাইয়েরা হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও বিন ইয়ামিনকে একটু বাঁকা চোখে দেখতো শয়তানের ওসওয়াসায় তাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্রও করেছিলো তারা। খেলার কথা বলে মাঠে এনেছিলো একদিন। হত্যার জন্য ফেলে দিয়েছিলো তাকে গভীর কূপের মধ্যে । অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিন্তু কথায় বলে না 'রাখে আল্লাহ মারে কে'? হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেলায়ও হলো ঠিক তাই। ঘটনাক্রমে হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বসবাস শুরু হলো মিসরের প্রধানমন্ত্রী আজিজের বাসগৃহে। বয়স আর কত হবে সতের কি আঠারো। ছিলেন দুইকি তিন বছর। বেড়ে ওঠতে লাগলেন হযরত ইউসুফ আলাইহি ধীরে ধীরে । রূপে-গুণে । আচার-আচরণে । চাল-চলনে তিনি হয়ে ওঠলেন প্রস্ফুটিত ও সুরভিত গোলাপের মতো। তাঁর এসব গুণাবলীতে দিনে দিনে মোহিত হচ্ছেন সবাই । তার সৎ চরিত্রের সার্টিফিকেটও ছিলো সবার হাতে হাতে । প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীর নাম জোলায়খা। সে ভীষণ ভালোবাসতো হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলাইহি -কে। হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্যে পাগল হয়ে পড়লেন জোলায়খা । ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী। অসম্ভব অপরূপা জোলায়খা। দীর্ঘ দিন হাবুডুবু খেতে লাগলো প্রেম সাগরে । শয়তানের সরাসরি হস্তক্ষেপে তার সাথে অবৈধ প্রেমে লিপ্ত হওয়ার আহ্বান জানায় জোলায়খা, একদিন লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে । আহবান জানায় ছলনাময়ী হয়ে বিনীত ও কাতর কণ্ঠে। কিন্তু কী করে সম্ভব? এটা যে একদম অসম্ভব । হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আল্লাহর নবী ।
অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে তিনি প্রত্যাখ্যান করে চলতে লাগলেন জোলায়খার কু-প্রস্তাব। সিদ্ধান্তে অটল। কিন্তু এড়াতে যে পারেন না। কোন রকম কলা-কৌশলে ।
হঠাৎ একদিন। ঘটে গেলো অন্যরকম ঘটনা। একাকী পেয়ে হযরত ইউসুফ আসাল্লাম-কে আহ্বান জানালেন । কুকর্মের জন্যে পাগল আজিজ পত্নী জোলায়খা। নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তিনি, পানাহ চাই আল্লাহর কাছে । আর আপনি কি ভুলে গেছেন? আপনার স্বামীতো আমার মুনিব । আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে দিলেন দৌড় । পিছন থেকে জামা টেনে ধরলেন জোলায়খা। জামাও ছিঁড়ে গেলো হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ।
দরজার কাছে যেতে না যেতেই চলে আসলেন প্রধান মন্ত্রী আজিজ । ভীত সন্ত্রস্ত আজিজ পত্নী জোলায়খা। অত্যন্ত সু-কৌশলে বিচারের সুর তুলে অভিযোগ করলো উলটো হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিরুদ্ধে। দেখো! এ যে তোমারই কেনা গোলাম তোমারই পত্নীর প্রতি হাত বাড়াতে উদ্যত । কতো বড়ো সাহস! আর কতো বড়ো স্পর্ধা? একে তাড়াতে হবে সহসা । আর সহ্য করা যায় না ।
মজার ব্যাপার হলো কি জানো? যিনিই অভিযোগকারী আবার তিনিই বিচারপতি । হযরত ইউসুফের প্রতি দুর্বলতার কারণেই বললেন । কী করা যায়? তাকে কয়েক দিন জেলে রাখা যেতে পারে। বেশ, তাই করা হলো । মহিলারই একজন স্বজন সাক্ষ্য দিলেন । যে ছিলো ছোট্ট শিশু। কথা বলার বয়স হয়নি এখনো পুরোপুরি তার। সে বললো যদি তাঁর জামার পিছন দিক দিয়ে ছেড়া হয় তাহলে হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দোষ। আর মহিলা মিথ্যাবাদী। আর যদি জামার সামনের দিক দিয়ে ছেঁড়া হয় তাহলে হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোষী। আজিজ পত্নী মহিলা সত্যবাদী।
আসলে জামার পিছন দিক দিয়ে ছেঁড়া ছিলো। যে কারণে হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন নির্দোষ আর অভিযোগকারী মহিলা আজিজ পত্নী হলো মিথ্যাবাদী। হলে কী হবে? অভিযোগকারী তো প্রভাবশালী ও দাপুটে। মহা শক্তিধর। প্রধানন্ত্রী আজিজের স্ত্রী বলে কথা। আর ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন তার কেনা গোলাম। আর যায় কোথায়? এরই নাম দুর্বলের প্রতি সবলের আঘাত । ক্ষমতা ও শক্তির দাপট বটে!
হযরত ইউসুফ আলাইি ওয়াসাল্লাম -কে নিক্ষেপ করা হলো জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে । হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লামও বলেছিলেন মহান আল্লাহর কাছে। হে আল্লাহ! তোমার নাফরমানির চেয়ে জেলে থাকা অনেক ভালো। থাকতে থাকলেন অন্ধকার কারাগারে । সেখানেই দিতে থাকলেন মানুষকে দীনের দাওয়াত । খাটতে লাগলেন মিথ্যা অভিযোগে কারাবাস। আল্লাহর ইচ্ছায় অতিবাহিত হলো তাঁর জীবন ।
ঘটনাক্রমে প্রধানমন্ত্রী আজিজ দেখলেন এক গুরুত্বপূর্ণ স্বপ্ন। তাবীরতো কেউ করতেই পারে না। চলে আসলো হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে । বলে দিলেন স্বপ্নের তাবীর হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনায়াসে। খুশি হলেন প্রধানমন্ত্রী বা আযিযে মিশর তাবীর মনোপৃত হলো তাঁর। সম্মান হিসেবে বের করে আনা হলো তাকে। আট অথবা নয় বছর অন্যায়ভাবে কারাভোগের পর অন্ধকার কারাগার হতে মুক্তি পান তিনি ।
শুধু কি তাই? ত্রিশ বছরের যুবক হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম । তাঁকে করা হলো দেশের খাদ্যমন্ত্রী। মন্ত্রণালয় চালাতে লাগলেন তিনি। অত্যন্ত দক্ষতা, সুনাম ও যোগ্যতার সাথে। আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততার কথাও ছড়িয়ে পড়লো সবখানে। মিসরে ত্রাণ নিতে আসলেন তার ভাইয়েরা । দীর্ঘ সময় পর দেখা হলো তাদের সাথে । ঘটলো এক নাটকীয় ঘটনা । কৌশল আঁটলেন হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ফন্দি করলেন পিতাকে দেখার । অপরাধী সাজালেন ছোট ভাই বিন ইয়ামিনকে আটক করলেন তাকে । ভাইয়েরা হলো চিন্তিত। হয়ে পড়লেন বিমর্ষ ও ব্যাকুল। আশস্ত করে বলা হলো তাদের। বিন ইয়ামিনের পিতা আসলেই মুক্তি দেয়া হবে তাকে। হলোও তাই । আসলেন হযরত ইয়াকুব আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এ যে ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরই পিতা। যিনি পুত্র শোকে কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়েছিলেন হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য। আর বিন ইয়ামিন তাঁরই আপন ছোট ভাই । ঘটলো এক আকর্ষণীয় মিলনমেলা। ঘটলো বেদনার সমাপ্তি সৃষ্টি হলো হারানো সম্পদ ফিরে পাওয়ার আনন্দ। সে কি অপরুপ দৃশ্য! এভাবেই মহান আল্লাহ হিফাজত করেন তার প্রিয় বান্দাহদেরকে। করেন সম্মানিতও । আশি বছর পর্যন্ত দেশ শাসন করে তিনি ইন্তিকাল করেন ১১০ বছর বয়সে। (সূরা ইউসুফ অবলম্বনে)
প্রশ্ন
১. কোন অপবাদে হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেলে গেলেন?
২. হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতার নাম কী?
৩. হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুক্তি পেলেন কিভাবে
৪. হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরুদ্ধে কে মিথ্যা অভিযোগ করেছিলো?
৫. আলাইহি হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন?