পুত্রের জন্য পিতার অকৃত্রিম ভালোবাসা
পুত্রের জন্য পিতার অকৃত্রিম ভালোবাসা
হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আসল নাম আব্দুল গাফফার । এছাড়াও তার নাম ছিলো শাকির । আল্লাহর ভয়ে অত্যধিক কান্নার কারণে নূহ হলো তার উপাধি। আল্লাহর নবীদের একজন ছিলেন তিনি অন্য নবীদের মতোই তিনি । আল্লাহর পয়গাম নিয়ে পাগলপারা হয়ে ছুটতেন । গ্রাম থেকে গ্রামে । শহর থেকে শহরে । প্রচার করতেন আল্লাহর বাণী। হে আমার জাতির লোকেরা, তোমরা এক আল্লাহর দাসত্ব করো। আর বিরত থাকো গায়রুল্লাহর দাসত্ব থেকে । এভাবে চলতে থাকলো বছরের পর বছর । যুগের পর যুগ । শতাব্দীর পর শতাব্দী । সত্যানুসন্ধানী ও সত্যানুরাগী লোকের সংখ্যা খুবই কম। সাড়ে নয়শো বছর দীনের দাওয়াত দেয়ার পর দাওয়াত কবুল করলো মাত্র চল্লিশ কিংবা আশি জন লোক ।
সত্যি বলতে কি জানো? দুঃখের বিষয় হলো নিজের ছেলে কিনানই দাওয়াত গ্রহণ করেনি । হতাশ হলেন আল্লাহর নবী। জাতির দুরবস্থার কথা জানালেন নবী তাঁর মহান প্রভু আল্লাহর কাছে । অনুরোধ করলেন নাফরমান জাতিকে ধ্বংস করার । আল্লাহ রাজী হলেন । আল্লাহর নবীর প্রার্থনায় । আর যায় কোথায়? নূহের জাতির লোকের ওপর সিন্ধান্ত হলো । আসমানি আযাব প্লাবনের । প্রশ্নের সৃষ্টি হলো। ঈমানদার মুসলমানরা বাঁচবে কিভাবে ?
আল্লাহ বাঁচাবেন তাঁর বান্দাহদের । সিদ্ধান্ত হলো । তারা ওঠবে কিস্তিতে । যারা কিস্তিতে ওঠবে তারাই বেঁচে যাবে প্রাণে । রক্ষা পাবে প্লাবন থেকে । নৌকা নিয়েও হলো হাসি-তামাশা। নৌকা বানাতে দেখে সত্য বিরোধী হোমরা-চোমরারা বললো। দেখো! নৌকায় হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গীরা থাকবে। আর আমরা সবাই ডুবে মরবো? বাকীরা সব প্লাবনে ভেসে যাবে । ও তাঁর থাকবেনা কোন নিদর্শন। ধ্বংস হয়ে যাবে সব কিছু । নৌকা বানানো শেষ হলো । নৌকাটি ছিলো তিন তলা । লম্বা ছিলো ১২০০ হাত। আর চওড়ায় ছিলো ৫৪০ হাত । বিশাল নৌকার যাত্রী হয়েছিলো এক জোড়া করে গরু, মহিষ, হাতিসহ সব প্রাণী ও ঈমানদার সকল মানুষ ।
আল্লাহর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্লাবন হলো শুরু। বিশ্বাসীরা সবাই ওঠলো আলাইহি হযরত নূহের ওয়াসাল্লাম নৌকায় অবিশ্বাসীরা রয়ে গেলো আল্লাহর আযাবের অপেক্ষায়। বিশ্বাসীদের নিয়ে এগিয়ে চললো নৌকা । পর্বতসম তরঙ্গমালার মাঝে । ঢেউয়ের তালে হেলে দুলে লক্ষ্যপানে ।
আলাইহি বিপজ্জনক এ মুহূর্তে হযরত নূহ আলাইহি এর পুত্রের টানে পিতৃত্ব জেগে ওঠলো প্রবল বেগে । নাফরমান পুত্রের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি । কাফিরদের সাথে সলিল সমাধি । চোখের সামনে দেখতে পেয়ে হয়ে পড়লেন ব্যাকুল বিচলিত। ক্লান্ত হয়ে পড়লেন তিনি মানসিক দুর্বলতায়। হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভেতরের মানুষটি জেগে ওঠে। নফস প্রাধান্য পেলো নবীর ওয়াসাল্লাম' ওপর ।
পিতৃস্নেহে আর কাতর কণ্ঠে । অনুনয় বিনয় করে পুত্রকে ডাকলেন তিনি হে পুত্র! ওঠে এসো । আমাদের সাথে । আর থেকো না কাফিরদের সাথে । তোমার জীবন সূর্য ডুবে যাবে। চুরমার হয়ে যাবে তোমার সব গর্ব অহংকার । পিতার শত অনুনয়-বিনয়ে বেকুব, বেয়াদব ও বেয়াড়া পুত্ৰ কোনো কর্ণপাতই করলো না। সে যৌবন ও শক্তি সামর্থের অহংবোধে ফুলে ফেঁপে ওঠলো । শুধু তাই না, অত্যন্ত দাম্ভিকতার সাথে বলে ওঠলো । আমার কিছুই হবে না অচিরেই আমি কোনো পাহাড়ে আশ্রয় নিবো । যা আমাকে পানি হতে রক্ষা করবে ।
পুত্রের দাম্ভিকতা ও কুফরি আচরণের পরও পিতৃস্নেহে ব্যাকুল হয়ে পড়লেন আলাইহি আল্লাহর নবী হযরত নূহ আলাহার । সর্বশেষ আহ্বান জানালেন তিনি । আজ আল্লাহর হুকুম থেকে কোনো রক্ষাকারী নেই। একমাত্র তিনিই রক্ষা পাবেন । যাকে মহান আল্লাহ দয়ার আধার দয়া করে রক্ষা করবেন । এর পর! এর পর যা হওয়ার তাই হলো । কথা-বার্তা বলার মধ্যেই হঠাৎ এসে গেলো স্বজোড়ে একটা তরঙ্গমালা। উভয়ের মাঝে আড়াল হয়ে পড়লো । পুত্রের প্রতি পিতার ভালোবাসার মধ্যে তৈরি হলো দেয়াল । চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিলো পিতা পুত্রের ভালোবাসার প্রাচীর তছনছ হয়ে পড়লো ভালোবাসার সূরম্য অট্টালিকা । ভাসিয়ে নিয়ে গেলো দু'জনকেই । প্রিয় পুত্র নিমজ্জিত হয়ে গেলো সেখানে। সলিল সমাধি ঘটলো তার। শুধু কি তার ছেলে? অবিশ্বাসী সব মানুষের । হাবুডুবু আর পানি খেতে খেতে । পানিতে ভেসে ভেসে। শরীর অবশ হয়ে। বিরামহীন ঠাণ্ডায় অনাহারে আর সাঁতারের কষ্ট ভোগ করতে করতে। সবাই মারা গেলো । সবাই মারা গেলো অত্যন্ত নির্মমও নির্দয়ভাবে ।
কত বড় মর্মান্তিক? ভয়ালো ও ভয়ানক সে দৃশ্য! পাহাড় সম ঢেউয়ের মাঝে নৌকা চলছে হেলে দুলে। পিতার ভালোবাসার কানাকড়ি মূল্যও দিলোনা বেয়াড়া ছেলে । শক্তির বাহাদুরি দেখিয়ে অবিশ্বাসী পুত্র। যে দৃশ্য অবলোকনে মানুষ কেন? বন্যপ্রাণীকেও করবে প্রভাবিত ও বেদনাপ্লুত । কিন্তু পাহাড় গললেও গলেনা কুফরির শক্ত হৃদয়। মুমিনরা জুদি পাহাড়ে অবতরণ করলেন সবাই বস্তি গড়লেন সেখানে। প্লাবনের পর ৬০ বছর বেঁচে ছিলেন হযরত নূহ । প্লাবন থেকে রক্ষা পেয়েছিলো হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর তিন পুত্র হাম, সাম ও ইয়াফিস ও তাঁর স্ত্রীসহ আশি জন আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমান। (সূরা হুদ অবলম্বনে )
প্রশ্ন
১. হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ছিলেন?
২. হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত বছর দীনের দাওয়াত দিয়েছিলেন?
৩. হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দাওয়াতে কতজন সাড়া দিয়েছিলেন?
৪. হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জাতিকে আল্লাহ কী শাস্তি দিয়েছিলেন?
৫. হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছেলে কিসের অহংকার করেছিলো?