স্বার্থপর দুজন বাগান মালিক
স্বার্থপর দু'জন বাগান মালিক
মানুষ স্বার্থপর । মানুষ অ-নে-ক স্বার্থপর ।
স্বার্থপর সর্বকালে ও সর্বযুগে ছিলো। স্বার্থপর ছিলো অতীতে। স্বার্থপর আছে এখনও। এ রকমই দু'জন । স্বার্থপর বাগান মালিকের গল্পই এখন বলবো । যারা শুধু নিজেদের স্বার্থ নিয়েই ভাবতো । ভাবতো সারাক্ষণ । ভাবতোনা অভাব অনটনে থাকা গরীব অথবা মিসকীনদের নিয়ে । অন্যদের নিয়ে তাদের ভাবার সময়ও ছিলো না একদম ।
যারা এ রকম স্বার্থপর হয় । স্বার্থপর সেই মানুষের পরিণতি কী? তাই বলা হবে এখানে । ফুলে ফলে সুশোভিত। ম-ম করা গন্ধে ভরা। সবুজ শ্যামলের সমারোহ । চোখ জুড়ানো ও মনভুলানো দু'টি বাগান ৷ দু'জন মানুষ এ বাগানের মালিক ।
রাতে তাদের ঘুম হলো না । এপাশ ওপাশ করছে তারা। দুশ্চিন্তা আর দুর্ভাবনায়। দুশ্চিন্তা প্রবল হয়ে ওঠলো তাদের হৃদয় সমুদ্রে। তাদের কিসের চিন্তা ও দুর্ভাবনা? তাদের দুর্ভাবনা একটাই ।
তাদের বাগান থেকে কিছু ফল খায় । গরীব-ফকীর ও মিসকিন লোকেরা । আর খেতে দেয়া হবে না । পুরোটাই খেতে হবে আমাদের । লাভবান হবো আমরাই । শপথ করে বসলো তারা । বাগানের ফল সংগ্রহ করবে সকালে ।
তারা ভুলে গেলো মহান আল্লাহর শক্তির কথা। বললোনা তারা ‘ইনশায়াল্লাহ’। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গরীব-ফকীর মিসকিন হবে বঞ্চিত। ঘুমের ঘোরে অচেতন তারা। অচেতন সুখনিদ্রায়। যখন তারা গভীর ঘুমে নিমজ্জিত তখন ঘটে গেলো অন্যরকম ঘটনা ।
আচমকা এক ঝড়ো হাওয়া। বয়ে গেলো ঘুর্ণিঝড়। সে কি ঝড়? বয়ে গেলো ফল বাগানের মধ্য দিয়ে। সব গেলো তছনছ হয়ে দুমড়ে মুচড়ে হয়ে গেলো সবকিছুই খড়কুটোর মতো। হয়ে গেলো সর্বনাশ! কিন্তু জানতোনা বাগান মালিকেরা। কী সর্বনাশই না ঘটে গেলো তাদের জীবনে কিছুই টের পেলোনা তারা ।
রাত গড়িয়ে সকাল হলো। সকাল বেলার মিষ্টি আলো পড়লো তাদের চোখে । একজন অপরজনকে ডেকে ওঠালো। কিহে! ওঠছোনা কেন? বাগানে যেতে হবে না? ওঠো, বাগানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হও। তারা ওঠলো । কথা বলতে লাগলো ফিসফিসিয়ে । ইশারা আর ইঙ্গিতে । টের যেন না পায় কোনো গরীব-দুঃখী। ফকির-মিসকিন। উপস্থিত হতে না পারে বাগানে । আনন্দের হাসি হাসতে হাসতে। মনের আনন্দে নাচতে নাচতে। তাদের আনন্দ ছিলো অনেক। তবে বঞ্চিত করার আনন্দ। তাদের আনন্দ ছিলো অন্যায় আর অসত্যে ভরপুর ।
চলে গেলো তারা বাগানের কাছে। পৌঁছলো বাগানের মধ্যে। তাদের পেয়ে বসলো বঞ্চিত করার বেদনা । মাথায় হাত! ধপাস করে বসে পড়লো তারা। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়। ভেঙ্গে গেলো আনন্দের বাকসো। আনন্দ খান খান হয়ে গেলো কাঁচের ভাঙ্গা গ্লাসের মতো। হতবাক আর হতভম্ব হয়ে থমকে দাঁড়িয়ে। একে অপরকে বলতে লাগলো আমরা কি আত্মভোলা? না, পথহারা পথিক? এ বাগান কি আমাদের? এরকমতো হওয়ার কথা নয়? আমরা কি সত্যি সত্যি নাকি স্বপ্ন দেখছি? এ বাগানতো আমাদের নয় । আসলে আমরা কি পথ হারিয়েছি? না কি আমাদের কপাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে? বুঝতে তো আমরা অক্ষম হচ্ছি। তাদের বিশ্বাসই হচ্ছে না। এটা কি তাদের বাগান? না, তাদের বাগানতো ফুলে ফলে ভরা । এটাতো হতেই পারে না। তাদের দু'জনের মধ্যে একজন ছিলো ঈমানদার। যিনি ঈমানদার তিনি বললেন। আমি কি তোমাকে বলিনি? আল্লাহ তা'য়ালার পবিত্রতা বর্ণনা করছো না কেন?
তাদের ভুল ভাঙলো । আর তারা খন বলে ওঠলো । আমরা আমাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আমরা যুলুম করেছি। ঘটনা যা ঘটার তা তো ঘটেই গেলো । আর অনুশোচনা করে লাভ কী? তারপরও অনুশোচনা ।
তার পরও যা হয় । একে অপরকে দোষারোপ করা । তাদের মধ্যেও হলো এরকম। বাক-বিতণ্ডা আর ঝগড়া-ঝাটি । লাগলো একে অপরকে ভর্ৎসনা করতে । তারা দু'জন মগ্ন হলো আত্মোপলব্ধি আর অনুশোচনায় । বলতে লাগলো-দুর্ভোগ আমাদের । আমরাই ছিলাম সীমা লঙ্ঘনকারী । সম্ভবত: আমাদের পালনকর্তা মহান আল্লাহ আমাদেরকে দিবেন এর চেয়েও উত্তম বাগান ৷
আমরা আমাদের প্রতিপালক মহান আল্লাহর কাছেই আশা করতে পারি । এভাবেই মহান আল্লাহ আত্ম প্রবঞ্চনাকারী ও জালিমদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে থাকেন । প্রতিফল ও প্রতিদান দিয়ে থাকেন গরীব ও মিসকিনদের ঠকানোর কাজেই আমাদের সকল কথা-কাজে থাকতে হবে আল্লাহর নির্ভরতা । মুক্ত থাকতে হবে অপরকে ঠকানোর খারাপ চিন্তা থেকে । সকল সম্পদে শরীক করতে হবে অভাবী ও বঞ্চিতদের । অংশ দিতে হবে গরীব ও মিসকিনদের । (সূরা আল কলম অবলম্বনে)
প্ৰশ্ন
১. বাগানের মালিক ছিলো কতোজন?
২. বাগানটি কী কারণে তছনছ হলো?
৩. ঘূর্ণিঝড়ের আগে বাগান কেমন ছিলো?
৪. ঘূর্ণিঝড়ের পরে বাগান কেমন হলো?
৫. মালিকদের অনুশোচনার কারণটি কী?