ফেরেশতাদের নামসমূহ
ফেরেশতাদের নাম রয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের অল্প কিছু নাম জানি। দলিলে যে ফেরেশতার নাম উদ্ধৃত হয়েছে সেটার প্রতি নামসহ ঈমান রাখা ওয়াজিব। অন্যথায় কোন ব্যক্তির ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনার সামগ্রিকতার মধ্যে তার প্রতি এজমালিভাবে ঈমান আনা অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
ফেরেশতাদের নামগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১। জিব্রাইল ও ২। মিকাঈল:
কুরআনে কারীমে এসেছে: “যে কেউ আল্লাহ্, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর রাসূলগণ এবং জিব্রীল ও মীকালের শত্রু হবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ কাফিরদের শত্রু”।[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ৯৮]
৩। ইস্রাফিল:
আবু সালামা বিন আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাঃ) বলেন: আমি উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী দিয়ে তার নামায পড়া শুরু করতেন; যখন তিনি রাত্রি বেলা নামায পড়তে দাঁড়াতেন। আয়েশা বলেন: যখন তিনি রাতের নামাযে দাঁড়াতেন তখন তিনি তাঁর নামায শুরু করতেন এই বলে:
اللَّهُمَّ رَبَّ جَبْرَائِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ . [رواه مسلم : 270]
“হে আল্লাহ! জিবরীল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের রব্ব, আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, গায়েব ও প্রকাশ্য সব কিছুর জ্ঞানী, আপনার বান্দাগণ যেসব বিষয়ে মতভেদে লিপ্ত আপনিই তার মীমাংসা করে দিবেন। যেসব বিষয়ে মতভেদ হয়েছে তন্মধ্যে আপনি আপনার অনুমতিক্রমে আমাকে যা সত্য সেদিকে পরিচালিত করুন। নিশ্চয় আপনি যাকে ইচ্ছা সরল পথ প্রদর্শন করেন।”[সহিহ মুসলিম (২৭০)]
৪। মালিক:
ইনি হচ্ছেন জাহান্নামের রক্ষী। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “তারা চিৎকার করে বলবে, ‘হে মালিক, তোমার রব যেন আমাদেরকে নিঃশেষ করে দেন...”।[সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৭৭]
৫। মুনকার ও ৬। নাকীর:
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “মৃত লোককে বা তোমাদের কাউকে যখন কবরের মধ্যে রাখা হয় তখন তার নিকট কালো বর্ণের ও নীল চোখবিশিষ্ট দুইজন ফেরেশতা আসেন। তাদের মধ্যে একজনকে মুনকার ও অন্যজনকে নাকীর বলা হয়। তারা উভয়ে (মৃত ব্যক্তিকে) প্রশ্ন করেন: তুমি এ ব্যক্তি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে কী বলতে? মৃত ব্যক্তিটি (যদি মুমিন হয় তাহলে) পূর্বে যা বলত তাই বলবে: তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য সত্য নয় এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। তখন তারা উভয়ে বলবেন: আমরা জানতাম তুমি এ কথাই বলবে। তারপর সে ব্যক্তির কবর দৈর্ঘ্য-প্রস্থে সত্তর হাত করে প্রশস্ত করা দেয়া হবে এবং করবে তার জন্য আলোর ব্যবস্থা করা হবে। তারপর সে লোককে বলা হবে: তুমি ঘুমিয়ে থাক। তখন সে বলবে: আমার পরিবার-পরিজনকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আমি তাদের নিকট ফিরে যেতে চাই। তারা উভয়ে বলবেন: বাসর ঘরের বরের মত তুমি ঘুমাও, যাকে তার পরিবারের সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ জাগায় না। অবশেষে আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তাকে তার বিছানা হতে জাগিয়ে তুলবেন। আর মৃত লোকটি যদি মুনাফিক হয় তাহলে (প্রশ্নের উত্তরে) বলবে: তার সম্পর্কে লোকদেরকে যা বলতে শুনেছি আমিও তাই বলতাম; আমি কিছু জানি না। তখন ফেরেশতাদ্বয় বলবেন: আমরা জানতাম, তুমি এ কথাই বলবে। তারপর জমিনকে বলা হবে, একে চাপ দাও। সে লোককে জমিন এমনভাবে চাপ দিবে যে, তার পাঁজরের হাড়গুলো একটি অপরটির মধ্যে ঢুকে যাবে। (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ তাকে তার এ বিছানা হতে উঠানো পর্যন্ত সে লোক এভাবেই আযাব পেতে থাকবে।”[সুনানে তিরমিযি (১০৭১), আবু ঈসা বলেন: হাদিসটি হাসান, গরীব এবং হাদিসটিকে ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৭২৪) হাসান বলা হয়েছে]
৭। হারুত ও ৮। মারুত:
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “এবং ব্যবিলনে দুই ফেরেশতার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছিল।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১০২]
এরা ছাড়াও আরও অনেক ফেরেশতারা রয়েছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আর আপনার প্রভুর বাহিনী সম্পর্কে কেবল তিনিই জানেন। এটা (জাহান্নামের এই বর্ণনা) বস্তুত মানুষের জন্য এক সতর্কবাণী।”[সূরা মুদ্দাছ্ছির, আয়াত: ৩১]