অন্যদের দোষারোপ ও অবজ্ঞায় দুঃখ করবেন না

Rumman Ansari   2023-04-09   Developer   islam > অন্যদের দোষারোপ ও অবজ্ঞায় দুঃখ করবেন না   303 Share

দোষারোপ করা বা অভিযোগ করা কখনই ভালো কিছু বয়ে আনে না। কেউই নিখুঁত নয়। আমাদেরকে 'সমঝোতা'র অর্থ উপলব্ধি করতে হবে, যা নিয়ে যেতে পারে একটি অতি প্রয়োজনীয় ফলাফলের দিকে। মনে করুন, আজই আপনার জীবনের শেষ দিন, এভাবে দিন কাটান। যদি জীবন সম্বন্ধে এমন দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তবে যে সময়টুকু আপনি পাবেন- তা অযথা নষ্ট হবে না। কোনো না কোনো ভালো কাজ করতে আপনি সক্ষম হবেন। ‘সকাল বেলা সন্ধ্যা দেখার আশা করো না। আর সন্ধ্যাকালে সকাল দেখার আশা করো না।’ অন্যকথায়, অতীত নিয়ে না ভেবে ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে; আত্মা-দেহ-মন নিয়ে জীবন শুধু আজকের জন্যই।

স্বীকার করুন নিজের দোষটাও

দু-তিনজন ব্যক্তির মধ্যে যখন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়, তখন শুধু এক পক্ষকে আমরা দায়ী করে থাকি। বিষয়টা কিন্তু একেবারেই ভুল। হয়তো কারও দোষ কম বা বেশি থাকে, তবে প্রত্যেককেই নিজের অবস্থান থেকে বিষয়টি বুঝতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হ্যাঁ কেউ একজন হয়তো আপনাকে দোষারোপ করছে, কিন্তু ভেবে দেখুন, আপনি এমন কিছু করেছেন কি না, যার ফলে অপর ব্যক্তিটি এমন আচরণ করছেন।’

আবার এমনও রয়েছে, ব্যক্তি কোনো কাজে সফল হতে না পারলে দোষ সরাসরি চাপিয়ে দেন অন্যের ওপর। হয়তো একটি সিদ্ধান্ত খারাপ হলো, আর অমনি আপনি দোষ দিয়ে বসলেন আপনার পরিবারকে। কেননা ‘পরিবারের জন্যই তো আমি এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছি’ বলে বসলেন।

আর এর ফলে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনার সঙ্গে পরিবারের অন্যদের একটা দূরত্ব তৈরি হয়। অনেক দিনের চেনা বন্ধুও এ কারণে পরিণত হন একেবারে অপরিচিত মানুষে।


তাই ভেবে দেখুন কিছু বিষয়

 ১. অন্যের অবস্থানে নিজেকে বিবেচনা করা

আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে হয়তো দোষটা অপর ব্যক্তিরই। কিন্তু খেয়াল করুন, অপর প্রান্তের ব্যক্তিটিও হয়তো তা-ই মনে করছেন। শেষমেশ কোনো সমাধানই কিন্তু হচ্ছে না। তাই বিষয়টিকে অন্যের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করুন। আপনারও কোনো দোষ আছে কি না, যার ফলে সূক্ষ্ম কারণে হলেও এই বিবাদের সৃষ্টি হয়েছে।

২. ভালো-মন্দ মেনে নেওয়ার মানসিকতা

জীবনে চলার এই পথটা একান্তই আপনার। তাই পরিবার বা কাছের মানুষ বিভিন্ন পরামর্শ দিলেও সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। সেটি নেওয়ার সময় সফলতা কিংবা ব্যর্থতা দুটোকেই মাথায় রাখুন। যদি সিদ্ধান্তটি সঠিক না-ও হয়, তারপরও অযথা কাউকে দোষারোপ করা ঠিক নয়। কেননা বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব নিজেরই।

 ৩. নিজে ছোট হওয়ার কিছুই নেই

হ্যাঁ, ভুলত্রুটি তো মানুষই করে। আপনিও না হয় ভুলবশত এমন কিছু বলে ফেলেছেন যার ফলে এই দ্বন্দ্ব। কিন্তু নিজের ভুল স্বীকার করে অপর প্রান্তে থাকা মানুষটিকে জানিয়ে দিন। তাঁকে বুঝিয়ে বলুন। আর এই ভুল স্বীকার করায় ছোট হওয়ার কিছু নেই।

 ৪. আলোচনা করে বুঝিয়ে বলুন

কোন বিষয়টি আপনাকে আঘাত করেছে, সেটি খোলামেলা করে বুঝিয়ে বলুন। কেননা কোনো কিছু চাপিয়ে না রেখে আলোচনা করার মাধ্যমেই সমাধান মিলবে। এবার ভেবে দেখুন তো, আপনার নিজের দোষটা কোথায়! 


لَن يَضُرُّوكُمْ إِلَّا أَذًى

“সামান্য কষ্ট দেয়া ছাড়া তারা তোমাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১১১)

“তারা যে ষড়যন্ত্র করে তাতে আপনি মনোক্ষুন্ন হবেন না।” (১৬-সূরা আন নাহল: ১২৭)

এবং তাদেরকে কষ্ট দিবেন না (বা তাদের কষ্টকে উপেক্ষা করুন) এবং আল্লাহর উপর ভরসা করুন। (৩৩-সূরা আল আহযাব: ৪৮)

“অতপর আল্লাহ তাকে অর্থাৎ মূসা (আঃ)-কে তাদের অভিযোগ থেকে নির্দোষ প্রমাণিত করলেন।” (৩৩-সূরা আল আহযাব: ৬৯)

একজন আরবদেশী কবি বলেছেন-

“বালকেরা যখন বিশাল সাগরে পাথরের নুড়ি নিক্ষেপ করে তখন এ বিশাল সাগরের কোন ক্ষতি হয় না।"

একখানি হাসান হাদীসে আছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

“আমার নিকট আমার সাহাবীদের দোষ বর্ণনা কর না, আমি প্রশান্ত চিত্তে তোমাদেরকে ত্যাগ করে চলে যেতে চাই।"