আবু লাহাবের সত্য বিরোধিতার ফল
আবু লাহাবের সত্য বিরোধিতার ফল
আরব দেশ ।
তিমির অমানিশা । ঘটলো আলোর বিস্ফোরণ। আবির্ভাব হলো শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর। আলোকিত হতে থাকলো বিশ্বময়। মহান আল্লাহর নির্দেশ। আমার সংবাদ পৌঁছাও। সর্বপ্রথম পৌঁছাও নিকটবর্তী আপনজনদের কাছে। আল্লাহর নবী। আল্লাহর কথা শোনাই তাঁর প্রধান কাজ । গভীরভাবে ভাবলেন তিনি । কী করা যায়? বুদ্ধি পেয়ে গেলেন সাথে সাথে । অনুসরণ করব আরব্য রীতি ।
খুব সকাল । পূর্ব আকাশে সূর্য। উঁকিঝুঁকি মারছে মাত্র। ওঠলেন সাফা পাহাড়ের চূড়ায় । আরব দেশে এমনই হতো। কোনো সমূহ বিপদ সম্ভাবনা যখন দেখা দিতো । চূড়ায় ওঠে সতর্ক করা হতো সবাইকে । আর এটাই হলো বিপদ সংকেত পদ্ধতি। আল্লাহর নবীও তাই করলেন। বুলন্দ আওয়াজে চিৎকার করে বললেন ইয়া ছাবাহাহ! হায়! সকাল বেলার বিপদ ! রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আওয়াজ পৌঁছে গেলো সবার কানেকানে । বলাবলি করতে লাগলো একে অপরকে। কে দিচ্ছে এ আওয়াজ? বলা হলো মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ। পঙ্গ পালের ন্যায় ছুটে আসলো সবাই । যে পারলো না বার্ধক্য বা অসুস্থতায় সে পাঠালো প্রতিনিধি । এভাবেই সবাই পাহাড়ের পাদদেশে হলো সমবেত। সবার মধ্যে একধরণের আতংক ও ভীত সন্ত্রস্তভাব । চললো কানাকানিও ।
এরপর আল্লাহর রাসূল প্রত্যেকটা গোত্রের নাম সম্বোধন করে বললেন । হে বনুহাসেম, হে বনু আব্দুল মুত্তালিব, হে বনু ফিহর। আমি যদি বলি পাহাড়ের পিছনে তোমাদের আক্রমণকারী সেনা দল রয়েছে। তোমরা কি তা মেনে নিবে? আমার কথা কি তোমরা বিশ্বাস করবে? সমস্বরে সবার জবাব হলো অবশ্যই । কারণ তুমিতো কখনো মিথ্যা বলোনি। তোমাকে আমরা সাদিক ও আল আমিন বলেইতো জানি ।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন। তাহলে তোমাদেরকে বলছি। তোমরা আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোন, তোমরা সবাই এক আল্লাহর আনুগত্য করো। যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে। আমাদেরকে এবং বিশ্ব জাহানের সবাইকে। আর তা না হলে, অপেক্ষা করো। ভয়াবহ কঠিন আযাবের। যা কারো জন্য মঙ্গলজনক নহে। আমি সে আযাবের শঙ্কাই করছি তোমাদের জন্য ।
সকলের মতো সেখানে উপস্থিত ছিলো আবু লাহাব। আবু লাহাব হলো ইবনে আব্দুল মুত্তালিব। সম্পর্কে হতো হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আপন '' চাচা । চাচা হলে কী হবে? আগে থেকেই হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিপক্ষে। সত্য ও সুন্দর এ কারণে একদম পছন্দ হতো না তার। হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াতিম হওয়ার পর থেকেই পালন করেনি চাচার দায়িত্ব। দেয়নি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে আশ্রয়। বরং দিয়েছে একের পর এক কষ্ট । অশান্তি আর দুর্ব্যবহার ।
জ্বলে ওঠলো কেবলমাত্র সে। সে কি জ্বলে ওঠা! তেলে আর বেগুনে । বলে ওঠলো গালি দিয়ে। “তাব্বালাকা আলিহাজা জামায়াতানা ?” সর্বনাশ হোক তোমার। এজন্যই কী তুমি আমাদের ডেকেছো? বলতে বলতে পাথর ছুড়ে মেরেছিলো প্রিয় নবীর দিকে। এভাবে আবু লাহাবের নির্যাতনের তীর আসতে লাগলো হযরত মুহাম্মাদের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিকে ।
আবু লাহাব একদা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলো। তোমার দীন গ্রহণ করলে আমি কী পাবো? হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাফ জবাব । কেনো? অন্যান্য ঈমানদার যা পায়? আবু লাহাবের প্রশ্ন । বাড়তি কোনো মর্যাদা আমার জন্য কি কিছুই নেই? হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন। চাচা আপনি আর কী চান? উত্তরে বললো, তোমার দীনের যেখানে আমার ও অন্যদের মর্যাদা সমান । তোমার সে দীন আমার লাগবে না। সে ছিলো অহংকারী। মক্কায় মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিকটতম প্রতিবেশী ছিলো আবু লাহাব। উভয়ের ঘরের মাঝে ছিলো একটা মাত্র প্রাচীর। আরও প্রতিবেশী ছিলো হাকাম ইবনে আস । উকবা ইবনে আবু মঈত । আদী ইবনে হামরা । ইবনুল আস দায়েল হুজালী ।
এ প্রতিবেশীরা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দিতো। নিজ বাড়ীতেও করে রাখতো ভীতসন্ত্রস্ত । নামাজরত অবস্থায় গায়ে জড়িয়ে দিতো উটের নাড়ি ভুঁড়ি। রান্নার হাড়িতে ছুড়ে মারতো ময়লা আবর্জনা । আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সয়ে যেতেন সব নীরবে ও নিঃশব্দে। বাহির থেকে এসে শুধু মাঝে মাঝে বলতেন, হে বনি ইবনে আব্দে মানাফ। এ কেমন প্রতিবেশীসুলভ আচরণ তোমাদের? আরো একজন কষ্টদিতো। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে । পথে বিছিয়ে রাখতো কাটা । বিধতো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সন্তানদের পায়ে। এটা ছিলো তার প্রতি দিনের কাজ। কাঁটার যন্ত্রণা কেমন? লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো আর খিলখিল করে হাসতো । সে আর কেহ নয় উম্মে জামিল । আবু লাহাবেরই স্ত্রী। আবু সুফিয়ানের আপন বোন ।
নবুয়তের পূর্বে রাসূলের দু'মেয়ের বিয়ে হয়েছিলো আবু লাহাবের দু'ছেলে উতবা ও উতাইবার সাথে। তারা দু'জনে তাদের বউকে তালাক দিয়ে ছিলো আবু লাহাবের নির্দেশে । উতাইবা আল্লাহর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে করেছিলো চরম বেয়াদবি। রাসূলের গায়ে মেরে ছিলো থুথু কিন্তু লাগেনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গায়ে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বদদোয়া করেছিলেন তাকে । সে কারণেই তাকে একটি কুকুর জীবন্ত ছিন্ন ভিন্ন করেছিলো । আল্লাহর রাসূল যেখানেই দ্বীনের দাওয়াত দিতেন। ডাকতেন মানুষকে আল্লাহর পথে। সেখানেই আবু লাহাব তাকে মিথ্যুক বলে অপপ্রচার চালাতো। সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিলো তার অত্যাচার ও নির্যাতন ।
অনেক নির্যাতন করেছে। পাথর মেরেছে। রক্তাক্ত করেছে আল্লাহর রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনকি শি'বে আবু তালিবের সময়ও সে সমঝোতা করে কাফেরদের সাথে। সব মিলিয়ে তার দুষ্ট হাত ও দুষ্ট আচরণের কারণে তাকে জাতির কাছে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় বদদোয়ার জন্য । ধ্বংশ হোক আবু লাহাবের হাত দু'টো। ধ্বংশ হোক আবু লাহাব নিজেও ।
আবু লাহাব কিন্তু আবু লাহাব নয়। আবু লাহাব স্বয়ং আল্লাহর দেয়া উপাধি। তার আসল নাম ছিলো আব্দুল উযযা। আর গায়ের রং ছিলো উজ্জ্বল লাল মিশানো সাদা। যেন দুধে আলতা কিন্তু তার কাজ কর্মে হয়ে গেলো কুৎসিত ও নাফরমান। আগুনের শিখা । আবু লাহাব মানে আগুন বরণ । যেহেতু সে আগুনে জ্বলবে। তাই আল্লাহ তার এ নামটিই পছন্দ করলেন তার জন্য। অভিশপ্ত হয়ে থাকলো বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় পাতায় । (সূরা লাহাব অবলম্বনে)
প্রশ্ন
১. হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর প্রথম কে পাথর মেরেছিলো?
২. হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথে কে কাঁটা বিছাতো?
৩. আবু লাহাবের আসল নাম কী ছিলো?
৪. আবু লাহাব উপাধি কে কাকে দিয়েছিলো?
৫. রাসূলের উপর দেয়া আবু লাহাবের তিনটি শাস্তির নাম কী ?