ভাইয়ের জন্য বোনের ভালোবাসা

Rumman Ansari   2022-09-18   Developer   islam > love   568 Share

ভাইয়ের জন্য বোনের ভালোবাসা

মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত ।

এক মানুষ অপর মানুষের জন্য । একজন অপরজনকে ভালোবাসবে এটাই স্বাভাবিক । যেমন আল্লাহ ভালোবাসেন তার প্রিয় সৃষ্টি মানুষকে । মানুষ ভালোবাসে তার পরম প্রভু আল্লাহকে । অবশ্য ঈমানের দাবীতে। সন্তান ভালোবাসে তার পিতামাতাকে । মা ভালোবাসে তার আদরের সন্তানকে তেমনি ভালোবাসে ভাই-বোনকে । আর বোন ভালোবাসে তার প্রিয় ভাইকে ।

পুরনো দিনের কথা । অনেক পুরনো দিনের কথা । হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের প্রায় একশত বছর পরের কথা। দেশ শাসনের ভার পায় ফেরআউন । সে ছিলো কিবতি বংশের। তার মধ্যে জেগে ওঠলো সংক্রীর্ণমনা জাতীয়তাবাদের । গভীরভাবে জাতীয়তাবাদের চেতনায় পেয়ে বসলো তাকে । সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। বেড়ে ওঠতে দেয়া যাবে না বনি ইসরাইলদেরকে। বনি ইসরাইল মিসরের আরেক প্রভাবশালী বংশ। এ গোত্রে জন্ম নেয় অনেক প্রভাবশালী নবী ও রাসূল । ফেরআউন চালাতে লাগলো বনি ইসরাইলদের ওপর দমন-পীড়ন দমন- -পীড়ন রূপ নিলো বহুরূপে । ঊর্বর জমির মালিকানা বাতিল । বাসগৃহ ও সম্পত্তি বঞ্চিত করা । সরকারী চাকুরীর অযোগ্য ঘোষণা ও হীন কাজের কর্মচারী নিয়োগ । কম পারিশ্রমিক প্রদান ইত্যাদি। এভাবেই চললো লাঞ্ছনা-গঞ্জনা আর অবমাননা । উদ্দেশ্য একটাই। বনি ইসরাইলদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া । দাবিয়ে রাখার অপচেষ্টা মাত্র।

ব্যর্থ! সবই ব্যর্থ! ফেরআউন আঁটলো নতুন বুদ্ধি ৷ বনি ইসরাইলকে দমাতে । শক্তি কমাতে । সংখ্যা অল্প রাখতে । সিদ্ধান্ত হলো মন্ত্ৰী হামানকে নিয়ে । ধ্বংস করতে হবে মূলে । ফরমান জারি হলো । লোক নিয়োগ করা হলো। গোয়েন্দা সদস্য। অনেক গোয়েন্দা সদস্য। যাবে বাড়ী বাড়ী । গর্ভবতী মায়েদের তালিকা হলো । ছেলে সন্তান হলে করা হবে হত্যা । বাদশাহী ফরমান। কার্যকর হলো খুব শক্তভাবে। হত্যা করা হচ্ছে বনি ইসরাইলদের সব পুত্র সন্তানদের। ইমরানের স্ত্রী আছিয়া । গর্ভবতী হয়ে প্রসব করলেন পুত্র সন্তান । নাম রাখলেন মুসা। কিবতী ও মিশরীয় ভাষায় মু' মানে পানি ‘উশা’ মানে উদ্ধারকৃত। মুসা মানে হলো পানি থেকে উদ্ধারকৃত । মুসার মা পড়ে গেলেন দুশ্চিন্তায় । পুত্র সন্তানকে রাখলেন অতি সংগোপনে । কিভাবে রাখবেন? কিভাবে বাঁচাবেন সন্তানকে? এটা নিয়েই এখন মাথাব্যাথা তার । বাড়ী বাড়ী আসছে মহিলা গোয়েন্দা। সাথে নিয়ে আসে শিশু সন্তান । যে কোনো মূল্যে কাঁদতে বাধ্য করা হয় কোলের শিশুকে । কাঁদার শব্দ শুনে ঘরে শিশু থাকলে কেঁদে ওঠে স্বভাবগতভাবে । যাতে করে বুঝা যায়, লুকানো কোনো সন্তান আছে ঘরের মধ্যে ।

চিন্তার আর শেষ নেই। এ যেনো বিরামহীন ভাবনা। ইলহাম হলো আছিয়ার কাছে। শিশু মুসাকে বাক্স বন্দী করে ভাসিয়ে দাও নীল নদে ।মুসার পূর্বে ইমরানের আরো দু'সন্তান। এক ছেলের নাম হারুন । আর একটি মেয়ে নাম মারইয়াম । মুসার মা পড়ে গেলেন বিপদে । নদীতে ভাসালে মুসার জীবন রক্ষা হবে কিভাবে? মুসা কি তাহলে মরেই যাবে? আল্লাহরই যে নির্দেশ। বাক্স তৈরি করলেন। মুসাকে বাক্সে ঢুকালেন । তারপর ছেড়ে দিলেন কয়েক মাসের শিশু মুসাকে আল্লাহর নামে । কাঁদে মুসার মা। কাঁদে বাবা । আরো কাঁদে ভাই ও বোন। দশ বছরের বোন মারইয়াম বুদ্ধি আঁটলো। উথলে উঠলো ভাইয়ের জন্য বোনের ভালোবাসা । ভাই ভাসতে ভাসতে কোথায় যায় দেখবে সে ।

সতর্কতার সাথে । অতি সতর্কতার সাথে । টের যাতে না পায় কেহ । কেহ যাতে সামান্য টেরও না পায়। কথা অনুযায়ী কাজ । ভাই যায় পানিতে ভাসতে ভাসতে । বোন যায় নদীর কূলে কূলে সংগোপনে হাঁটতে হাঁটতে । বাক্স থামালো ফেরআউনের দাসীরা । ফেরআউনেরই ঘাটে । চমকে উঠলো মারইয়াম । হায়! হায়! যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয় । আমার ভাইয়ের কী হবে উপায়? কিছু বলে না শুধু দূর থেকে দেখে আর ভাবে । বাক্স গিয়ে পৌছলো ফেরআউনের ঘাটে ।

ভাসমান বাক্স খুলে ফেরআউনের লোকেরা । হতবাক হয়ে যায় দাসীরা । বাহ! এতো সুন্দর শিশু! ফুট ফুটে আলতো মাখা চেহারা । গায়ের রং যেন পুর্ণিমার চাঁদের আলো। দৌড়ে নিয়ে গেলো ফেরআউন ও তার স্ত্রীর কাছে । চলছে আলোচনা ও চুলচেরা বিশ্লেষণ । কী করা হবে এ সন্তানকে? কেহ পরামর্শ দিচ্ছে মেরে ফেলার। কেহ পরামর্শ দিচ্ছে লালন পালন করার। কেহবা বলছে এ সন্তান হবে বনি ইসরাইলের সন্তান। কোন কেউটে সাপের বাচ্চা পরে বড় হয়ে ছোবল মারবে আপনাকে ।

হরেক রকম মানুষ। নানান রকম মত। ফেরআউনের স্ত্রী শিশুটিকে দেখলেন নিজ চোখে । চোখ আটকে গেলো শিশুর সুন্দর চেহারায় । জেগে ওঠলো মাতৃস্নেহ । হৃদয়ে জোয়ার সৃষ্টি হলো ভালোবাসার । মায়ের স্নেহে লালন পালন আর পুত্রের মর্যাদা দানের আবদার জানালেন তিনি । 

ফিরআউনকে তিনি বললেন। সন্তান বড় হয়ে গড়ে উঠবে আমাদের আদর্শে । পরিচয় দিবে কিবতি হিসেবে । আমাদের অসুবিধা কী তাতে? গলে গেলো ফেরআউনের মন । মেনে নিলো স্ত্রীর আবদার । সিদ্ধান্ত হলো সন্তান পালনের । শিশুর মুখে দেয়া হচ্ছে ধাত্রীদের স্তন। পান করছে না কারো দুধ । মুখ সরিয়ে নিচ্ছে মুসা । দূর থেকে আড়ালে আবডালে দেখছে মারইয়াম। ফেলে দিয়ে ভয় আর জড়তা। বেরিয়ে এলো সবার মাঝে । প্রস্তাব দিলো সে, আমাকে দায়িত্ব দিন। আমি ভালো ধাত্রী এনে দিবো । যে পান করাবে দুধ । শিশু পালন করবে অতি যত্ন সহকারে । শিশু বেড়ে উঠবে আদর সোহাগ আর ভালোবাসার পরশে ।

মারইয়ামের প্রস্তাবে রাজি হলো ফেরআউন দম্পতি । আল্লাহর পরিকল্পনা হলো বাস্তবায়ন । ধাত্রী মনোনীত হলো মুসার মা আছিয়া । দুধ পান শুরু করে মুসা । বেড়ে ওঠতে থাকলো ধীরে ধীরে । কিবতীয় চরিত্র গ্রহণ করে না সে । তার আদর্শ হয়ে ওঠে বনি ইসরাইলীয় । প্রবাদ বাক্য হয় সত্য । “কুলু শাইয়্যিন ইয়ারজিউ ইলা আছলিহী'। সকল জিনিস ফিরে আসে মূলের দিকে । মুসার ক্ষেত্রেও হলো তাই । আল্লাহ রক্ষা করলেন মুসাকে মুসা হলেন আল্লাহর নবী । (সূরা আল কাসাস অবলম্বনে)

প্রশ্ন

১. হযরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বংশের সন্তান?

২. হযরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কারা উদ্ধার করেছিলো ? 

৩. হযরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কোন নদীতে ভাসানো হয়েছিলো?

৪. হযরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভাই বোনের নাম কী?

৫. হযরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিতামাতার নাম কী?