শানে নযুল কি,শানে নযুল জানার গুরুত্ব বা উপকারিতা কি?
শানে নযুল কি,শানে নযুল জানার গুরুত্ব বা উপকারিতা কি?
কুরআনুল কারীমের আয়াতসমুহ দুই প্রকারেরঃ প্রথমতঃ ঐ সমস্ত আয়াত যেগুলি কোন উপলক্ষ ছাড়া আল্লাহ তাআলা বর্ননামুলকভাবে নাযিল করেছেন। অর্থাৎ কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে বা কারো প্রশ্নের জবাব দানের উদ্দেশ্যে নাযিল করেননি।
দ্বিতীয়তঃ ঐ সমস্ত আয়াত যেগুলি সংঘটিত কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে অথবা উত্থাপিত কোন প্রশ্নের জবাবে নাযিল করা হয়েছে। মূলতঃ আয়াত নাযিল হওয়ার পটভূমিতে বিদ্যমান এইরুপ প্রশ্ন বা ঘটনাকে সেই আয়াতের 'শানে যুল' বা 'সববে নুযূল' বলা হয়। দৃষ্টান্ত স্বরুপ সূরা বাকারার এই আয়াতটি উল্লেখ করা যেতে পারে "আর তোমরা মুশরেক নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্য মুসলমান ক্রীতদাসী মুশরেক নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদেরকে তোমাদের কাছে ভালো লাগে"। (বাক্বারা ২২১) উক্ত আয়াতটি একটি বিশষ ঘটনার পটভূমিতে নাযিল হয়েছে। শানে নুযুল জানার মাঝে অনেক উপকারীতা রয়েছে। আল্লামা সুয়ূতী (র) ইতকান গ্রন্থে শানে নুযুল জানার কয়েকটি বিশেষ উপকারীতা বর্ণনা করেছেন।
১। শানে নুযুল জানার মাধ্যমে আয়াতের মর্মার্থ খুব সহজে জানা যায় এবং বাক্যের অর্থ বুঝার ব্যাপারে সব সমস্যা দূরীভূত হয়।
২। শরীয়তের বিধানাবলীকে বিধান হিসেবে প্রয়োগ করার মূল রহস্য অবগত হওয়া। শানে নুযুল জানার মাধ্যমে শরীয়তের বিধি- বিধানসমুহের কারণ ও রহস্য জানা যায়।
৩। যে সব মুফাসসির মনে করেন যে, অবতারিত আয়াতের হুকুম বা বিধান শানে নুযুলের সাথে নির্দিষ্ট, তাদের মতানুযায়ী সে বিধানকে নির্দিষ্ট করতে হলে ঐ আয়াতের শানে নুযুল জানা অত্যাবশ্যক। নতুবা সে হুকুমকে খাস করা সম্ভব হবে না। ৪। কোন কোন সময় কুরআনের শব্দ ব্যাপক অর্থবোধক হয়,কিন্তু ঐ শব্দকে নির্দিষ্ট করার দলীলও বিদ্যমান থাকে। এমতাবস্থায় আয়াত নাযিলের কারন জানা থাকলে অন্যান্য বাহ্যিক অর্থ থেকে দলীলের মাধ্যমে হুকুমকে নির্দিষ্ট করা যায়।
৫। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (র) বলেন-শানে নুযুল জানা কুরআনে কারীমের আয়াতের অর্থ বুঝার জন্য সহায়ক। শানে নুযুল হল আয়াতের নাযিলের কারন। সুতরাং শানে নুযুল জানা থাকলে আয়াতের অর্থ অনায়াসেই বুঝা যাবে।
৬। আল্লামা ওয়াহেদী (র) বলেন- কুরআনের আয়াতের শানে নুযুল এবং ঘটনা জানা ছাড়া কোন আয়াতের তাফসীর জানা সম্ভব নয়।
৭। কেউ কেউ বলেন- কুরআনুল কারীমের মর্মার্থ বুঝার জন্য শানে নুযুল জানা একটি শক্তিশালী পন্থা।
কোন কোন মুফাসসির মনে করেন, পবিত্র কুরআন হল সর্বকালের সর্বযুগের মানুষের সার্বিক সমস্যার একমাত্র সমাধান গ্রন্থ। সুতরাং এর অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক ও সর্বজনীন। এর অর্থকে শানে নুযুল এর মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট অর্থে খাস করা ঠিক নয়। সুতরাং শানে নুযুল জানার প্রয়োজনীয়তা নেই। আল্লামা সুয়ূতী (র) তাদের মতামতকে প্রত্যাখান করে বলেন- যারা মনে করেন কুরআনের শানে নুযূল জানার মধ্যে তেমন কোন উপকারিতা নেই তারা এ ব্যাপারে ভুল করেছেন। বরং এটা জানার মাঝে অনেক উপকারীতা রয়েছে। কেননা পবিত্র কুরআন যদিও সর্বজনীন ও ব্যাপক বটে তবুও এর অধিকাংশ আয়াত ও সূরা তৎকালীন মানব সমাজ ও ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়। তা না হলে বিনা কারণে ও বিনা প্রেক্ষাপটে কুরআন নাযিল হলে এর গুরুত্ব তেমন অনুধাবন হত না। বরং তখন কুরআনের প্রতি অপবাদ দেয়া হত যে,এটা ঐতিহাসিক কোন প্রেক্ষাপট ছাড়াই বিনা কারণে নাযিল হয়েছে। অতএব কুরআনের শানে নুযুল জানার মাঝ অনেক উপকারিতা রয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই।