এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য | Post 1

Rumman Ansari   2019-10-05   Student   WhatsappStory > Maa   22161 Share

1. এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য

বেলা শেষে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে গোধূলি লগ্নে মায়ের উষ্ণতার পরশে দূর হয়ে যায় সব ক্লান্তি। বাষ্পীভূত চায়ের পেয়ালা... খোশ গল্প... রান্না ঘরের টুং টাং ঝংকারে চেনা সুর। মায়ের অনুভূতি সমস্ত ঘরে... মায়ের ঘ্রাণ সমস্ত শরীরে... মায়ের চিন্তা সমস্ত মন জুরে। জগদ্বিখ্যাত মনীষী আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, ‘আমি যা কিছু পেয়েছি, যা কিছু হয়েছি, অথবা যা হতে আশা করি, তার জন্য আমি আমার মায়ের কাছে ঋণী’।

কয়েক দিন আগে বাসার একটা বিষয় নিয়ে মায়ের সাথে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে। এর পর থেকে মায়ের মুখ ভার। বড় হ্ওয়ার অনেক হ্যাপা। দুর দিয়ে ঘুর ঘুর করি... কিছু বলি না... মা'ও বলে না। আমার ভেতর উথাল পাথাল। কি করা যায়... কি করা যায়। কিভাবে মায়ের রাগ ভাঙানো যায়। কষ্টে সারাটা রাত ঘুম আসেনি। কেনো এমন করলাম মায়ের সাথে? আরেকটু ভাল ভাবে বলা যেত কথাগুলো ।

2. এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য

উঠোনজুড়ে বোরো ধানের ছড়াছড়ি। বাবা, বোন ও ভাই কাজ শুরু করে দিয়েছেন। সেই ভোর থেকেই মা ডাকছেন। তারপরও ঘুম আমাকে ছাড়ে না। আবারও ডাকছেন সঙ্গে বকুনি। একটু অভিমান নিয়েই উঠে পড়ি। চোখে-মুখে এক ঝাপটা পানি দিয়েই নেমে পড়ি কাজে।

মা রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। নাস্তা তৈরি। সবাই এক সঙ্গে বসেই নাস্তা। শুধু মা ছাড়া। কাজ করতে করতে সকাল গড়িয়ে দুপুর। প্রখর রোদ। প্রচণ্ড গরম। আমি ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ি। এর ভিতরেই কাঁচা লেবুর এক গ্লাস শরবত মুখের সামনে ধরেন মা। আমার অভিমানের জয়গাটা মায়ায় ভরে গেল। বুঝতে পারি এই তো মা। যিনি সকাল বেলা বকুনি দিয়েছিলেন। কিন্তু মমতার কাছে টিকে থাকতে পারেনি মার বকুনি আর আমার অভিমানটুকু। লিখেছেন #পলাশ_কুমার_রায়

3. এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য

-মা এখন যাই। -যাই বলেনা বাবা, বল আসি। -আচ্ছা মা আসি।

এই বলে স্টেশনের দিকে হাঁটা ধরল রেহান। সে আজ ঢাকা যাচ্ছে। এইচ.এস.সি পাশের পর বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে কঠিন ভর্তিযুদ্ধ শুরু হয়। প্রথম দিকে কোথাও চান্স হচ্ছেনা দেখে সে হতাস বোধ করে। মাকে হতাসার কথা জানায় না। শুধু বলে পরীক্ষা দিচ্ছি। মা ছেলের মনের অবস্থা বুঝতে পারেন। ছেলেকে শান্তনা দেন। বলেন- 'আল্লাহর উপর ধৈর্য্য রাখ বাবা। তিনি তোর দিকে মুখ ফিরে চাইবেনই'। রেহান কিছু বলেনা। শুধু হাসে।

-ভাল করে একটু দোয়া করবে তো মা। তোমার দোয়া থাকলে সব হবে। -না বাবা। শুধু আমার দোয়া থাকলেই হবেনা। তুইও একটু নামাজ পড়িস। মোনাজাতে আল্লাহর কাছে যা চাবি তিনি তাই দেবেন। তিনি কারো চাওয়া অপূর্ণ রাখেন না।

আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা। রেহানের জন্য দিনটি স্মরণীয় হতে পারে আবার দু:স্বপ্নও হতে পারে। কারন এরপর আর কোথাও পরীক্ষা নেই। যদি এখানে চান্স না হয় তবে মাকে আর মুখ দেখাতে পারবেনা। অভাবের সংসারে কত কষ্ট করে মা সংসার চালাচ্ছেন তা শুধু রেহানই জানে। সম্পদ বলতে সামান্য কিছু ধানী জমি ছাড়া আর যে তাদের কিছুই নেই। নিজে না খেয়ে থেকে রেহানের লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছেন তারপরো কারো কাছে হাত পাতেন নি। সেই মাকে সে কষ্ট দিতে পারবেনা। কখনোই না।

4. এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য

ছেলেবেলায় আমার একটা খেলনা প্লেন ছিল , প্লাষ্টিকের ।

আকাশে বিমান দেখতাম , আর ভাবতাম আমার খেলনা প্লেনটা উড়ছে । মা মজা পেতেন , বলতেন , আমার ছেলে পাইলট হবে ..... পরক্ষণে ভাবতেন , স্বপ্নটা বোধহয় বেশি বড় হয়ে যায় .... সামলে বলতেন , না না , ও প্লেন বানাবে ।

আমি কখনোই কবি ছাড়া জীবনে কিছু হতে চাইনি ( জানি কথাটা হাস্যকর শোনায় ) , কিন্তু সত্যি , আমার এইম ইন লাইফ বলে কখনোই কিছু ছিল না ।

জীবনের বিরুদ্ধ স্রোতে পালতোলা এই আমি আজ এয়ারফোর্সে । আকাশে উড়ি , আকাশকে ভালোবেসে উড়ে চলি আমার ছেলেবেলার বিমান নিয়ে ....... যতদিন না মিশে যাব আকাশের মেঘ হয়ে ।

মা , আমি জানি তুমি ঐ আকাশে লুকিয়ে আছো ....... আমায় দেখছো ...... আমি ছেলেবেলায় বিস্কুট দৌড়ে কাঁচের গ্লাস পাওয়ায় যেমন খুশি হয়েছিলে , হয়তো আজও তুমি তেমনি খুশি ...... মাগো , তোমার এই খুশিটুকুর জন্য আমি উড়ে চলি আকাশ খেকে আকাশে ....... কোন কোন রাতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসলে আকাশের তারাগুলির মাঝে তোমাকে খুঁজি ........ না জানি কোন তারা হয়ে আমায় দেখছ তুমি .............

আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মা , অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি ।

লিখেছেন- #শামীম_শরীফ

5. এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য

খুবই সহজ , অথচ অনেক কঠিন একটা প্রশ্ন । মা'রা কেমন হয় , সম্ভবত তা প্রকাশ পাওয়ার জন্য কোন শব্দ বা বাক্য যথেষ্ট নয় । মা হীনতা কেমন হয় তা সম্ভবত প্রকাশ করার ক্ষমতা ঈশ্বর কাউকে দেন নি ।

আজ আম্মুর নবম মৃত্যুবার্ষিকী ।

আমার মা , খুবই সাধারণ একজন মহিলা ছিলেন । জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত , বাংলাদেশের আর দশটি মায়ের মত , তার সংসার ছিল তার পৃথিবী । একবুক আক্ষেপ নিয়ে যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন , তখন আমার বয়স তের ..... এমন একটি সময়ে , যখন আমার মা ছাড়া আমার পৃথিবীতে কেউই ছিল না ।

আমরা পাঁচ ভাইবোন । বাবা চিরকালই আত্নভোলা , মনভুলো মানুষ । আমাদের সংসার চালাতেন মা , আমি ঈশ্বর দেখিনি , আমাদের ঈশ্বর ছিলেন আমাদের মা ... আমি মা কে দেখতাম ।

অভাবের সংসার , আমার জন্ম হয়নি তখনও । মুক্তিযুদ্ধে আমার মা চারটি সন্তান কোলে ছুটে চলেছেন গ্রাম থেকে গ্রামে , আশ্রয়ের আশায় ....... বাবা নেদারল্যান্ডে স্কলারশীপে ........ জানিনা স্রষ্টা আমাদের মা'গুলিকে কি দিয়ে তৈরী করেছিলেন , যার জন্য আজও আমরা টিকে আছি ।

সারাটি জীবন কখনো আমার বাবা মা'কে ভালো একটা শাড়ি কিনে দিতে পারেননি । কখনো সততার দাম চুকিয়েছেন চাকুরি দিয়ে , ছায়ার মতো বিয়ের গহনা বিক্রি করে সংসার আগলে রেখেছেন আমাদের মা । কখনো কোন দিন , আমাদের বুঝতে দেননি । সারাজীবনে একটি শখও পূরণ হয়নি তার , একবুক আক্ষেপ ছাড়া কেউ কখনো তাকে দিতে পারেনি কিছুই - সে এক পাথর কেবলই লাবণ্য ধরে রাখে

6. এক বালকের আবেগ ভরা কিছু টুকরো কথা তার মায়ের জন্য

মার শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছিল , চিকিৎসার জন্য বাসার সবাই চলে গেল মাদ্রাজে ... আমার পাসপোর্ট নেই , মামাবাড়িতে পড়ে রইলাম আমি , আর একমাস পরেই বৃত্তি পরীক্ষা ।

বাসায় আমি একমাত্র পুরুষ ছিলাম , আমার মায়ের মৃত্যুর টেলিগ্রামটা সাইন করে রিসিভ করেছিলাম আমি ।

লাশ আটকে থাকল বর্ডারে । যেদিন পৌছালো .... সেদিন থেকে সারাদেশে হরতাল । একটা মাইক্রোবাসে একটা লাশ নিয়ে চলেছি আমরা পাথর ক'জন সন্তান , আমাদের মা এর লাশ ।

বাসায় পৌছালাম রাতে , বাসাতেই দাফন হলো ..... শ্রাশ্রুমুন্ডিত ইমাম ঘোষণা করলেন শেষবারের মত ........ তোমার মা নেই ।

আমি প্রচন্ড একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম , আমি সব দেখছিলাম , কিছু বুঝছিলাম না । আমি আমাদের ভাবাবেগহীন পিতাকে কাঁদতে দেখলাম .... আমি আমার হতদরিদ্র বাকী কাকার চোখে অশ্রু দেখলাম । শুধু আমিই কাঁদতে পারলাম না সেদিন , আমি কান্নাগুলি আমি জমিয়ে রাখলাম সারাজীবনের জন্য ।

আমার মা আমার জন্য কি ছিলেন ... আমি জানতাম না , সে বয়সে কখনো বুঝিনি ...... আমি কখনো নিজে নিজের চুল আঁচড়াইনি , কখনো জুতোর ফিতে বাঁধিনি নিজে ........ কখনো ভাবিনি এসব করতে হবে । আমার জ্বর হলে সারারাত মাথায় একটি হাত পেতাম ....... কখনো ভাবিনি নিজের ওষুধ নিজেকে কিনে খেতে হবে .........

আমি কি করিনি , সব কষ্টকে কান্নায় ছাপিয়ে প্রচন্ড জ্বরের গোরে সারারাত মা'কে ডেকেছি ....... চোখ ভিজে গেছে জামার খুলে পড়া বোতাম লাগাতে ..... হোস্টেলে রান্না পুড়িয়ে ফেলার পর । আমি কখনোই ভাবিনি আমি এমন হব , কখনো ভাবিনি এত দুঃসহ সময় কোন মানুষকে অতিক্রম করতে হয় কখনো .......

আমার মা কেমন ছিলেন ? আমি জানিনা । আমি শুধু এটুকু জানি .... আমার মা আমার পৃথিবী ছিলেন । আর সব সন্তান যেমন জানে এই সত্যিটা , কিন্তু আমি কখনোই চাইনা আর কেউ অনুভব করুক , যেমন আমি করি ।

আমার বন্ধুদের দেখেছি কারনে অকারণে মায়ের সাথে ঝগড়া করতে , আমি বলেছি ... যা দোস্ত , ক্ষমা চেয়ে আয় । আমার মা নেই , আমি বুঝি মা কি ।

আমি বুঝি , প্রতিবার এই কুৎসিত বাক্যটা উচ্চারণ করতে আমাকে কতখানি কষ্ট পেতে হয় । কেউ যখন গেয়ে ওঠে " সবাই বলে ওই আকাশে লুকিয়ে আছে " - কান্না সামলাবার জন্য আমাকে কতখানি চেষ্টা করতে হয়!! কার্টেসি- #শামীম_শরীফ